চাঁদা না দেওয়ায় ও মামলা করায় ময়মনসিংহে এক নারী নৃত্যশিল্পীকে মারধর ও চুল কেটে মুখে কালি মেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবারের ওই ঘটনার পর ভুক্তভোগীর কালি মাখানো মুখের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল রাতে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছেন। মামলার পর ওই দিন রাতে নগরীর জুবলীঘাট এলাকা থেকে শাহ আলম (৪০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার শাহ আলম নগরীর চর কালীবাড়ি এলাকার মো. রাশেদের ছেলে। তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বড় কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দির এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের একটি বস্তিতে বাস্তুহারা সমবায় সমিতির কাছ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ৩ লাখ টাকায় একটি জমি কেনেন নারী নৃত্যশিল্পী। গত বছর সেখানে আধা পাকা ঘর করতে গেলে সমবায় সমিতির সদস্য শাহ আলম তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেন। ১ লাখ টাকা চাঁদা পাওয়ার পর আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না পেয়ে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী নৃত্যশিল্পীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় তিনি আদালতে মামলা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৬ এপ্রিল নারীর স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে অপহরণ করেন আসামিরা। এ ঘটনায় গত ৯ এপ্রিল মামলা করলে আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ভুক্তভোগীর করা ভাঙচুরের মামলার তদন্ত করতে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর আসামিরা নারী নৃত্যশিল্পীকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করেন এবং চুল কেটে ও মুখে কালি মেখে হেনস্তা করেন। এ সময় তাঁর সামনে মাদক ও টাকা রেখে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে নারীর স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘পুলিশ চলে যাওয়ার পরই আমাকে রাস্তায় ধরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে চুল কেটে মুখে কালি মেখে দেয়। আমি বিচার চাই।’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাহ আলমের পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কেউ সাড়া দেয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মাসুদ জামেলী বলেন, ওই নারীকে বেঁধে চুল কেটে মারধর করা হয়েছে, মুখে কালি মেখে দেওয়া হয়েছে। দুটি পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই মামলা চলছিল। অপহরণ মামলার আসামিরা জামিনে ছিলেন। আদালতের আরও একটি ভাঙচুরের মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ফিরে আসে। তখন প্রতিপক্ষ রাস্তায় ওই নারীকে আটকে নির্যাতন চালায়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, মামলা তদন্ত করে পুলিশ ফিরে আসার পর ওই নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চুল কাটা ও মুখে কালি মেখে দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত চলছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসকের নিন্দা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগীর ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এক বিজ্ঞপ্তিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলেছে, ১২ নভেম্বর স্থানীয় কয়েকজন চিহ্নিত দুর্বৃত্ত এক নারী নৃত্যশিল্পীকে প্রকাশ্যে মারধর করে, তাঁর চুল কেটে দেয় এবং মুখে কালি মেখে দিয়ে হেনস্তা করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, এ ধরনের ঘটনা কেবল একজন নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিশ্রুত মৌলিক অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা দণ্ডবিধিতে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন ও শ্লীলতাহানির অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। প্রকাশ্যে একজন নারীর ওপর এমন নিষ্ঠুর নির্যাতন শুধু আইনের অবমাননা নয়, এটি নারীর মর্যাদার প্রতি সরাসরি আঘাত। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা, চিকিৎসা, সামাজিক ও আইনি সহায়তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সুরক্ষার স্বার্থে এ ধরনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর নীতি নিতে হবে।




