২০২৬ এশিয়ান কাপে খেলতে হলে হতে হবে গ্রুপসেরা—এমন কঠিন সমীকরণ সামনে রেখে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমারের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও মাঠে আধিপত্য ছিল ঋতুপর্ণা চাকমা-শামসুন্নাহার জুনিয়রদের। দারুণ জয়ে ইতিহাসের পথে এক পা দিয়ে রাখল পিটার বাটলারের শিষ্যরা।
বুধবার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়ামে ২-১ গোলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দুটো গোলই করেছেন তারকা ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা। মিয়ানমারের হয়ে একটি গোল করেন উইন।
ম্যাচের শুরু থেকেই বলের নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশ। তবে বল দখলের সেই প্রাধান্যকে গোলের সুযোগে রূপান্তর করতে কিছুটা সময় লেগেছে। ১৭তম মিনিটে ডান দিক দিয়ে একক গতিতে বল টেনে নিয়ে ডি-বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন শামসুন্নাহার। তার এই প্রচেষ্টা মিয়ানমারের রক্ষণে বাধাপ্রাপ্ত হলেও ফাউল আদায় করে নেন।
সেই সুযোগকে গোলে রুপান্তর করেন ঋতুপর্ণা। ফ্রি-কিক থেকে প্রথমে তার শট প্রতিহত হলেও ফিরতি বলেই জালের ঠিকানা খুঁজে পান এই মিডফিল্ডার। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
এরপর থেকেই বাংলাদেশের আক্রমণ যেন আরও ধারালো হয়ে ওঠে। মিয়ানমারের রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে একের পর এক আক্রমণে।
২৩তম মিনিটে আরও একবার চোখধাঁধানো দৃশ্য উপহার দেন ঋতুপর্ণা। বাম প্রান্ত দিয়ে তার নিখুঁত ক্রসে প্রায় গোল হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় বল পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়।
২৬তম মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল মিয়ানমারও। তবে রক্ষণভাগ এবং গোলরক্ষক রুপনা চাকমার দৃঢ়তায় সে যাত্রা বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
যদিও ৩৬তম মিনিটে রুপনার এক ভুলে মাঝমাঠ থেকে মিয়ানমার গোল করেছিল, কিন্তু রেফারির বাঁশি বাঁচায় বাংলাদেশকে—সেই গোল অফসাইডে বাতিল হয়।
৩৭তম মিনিটে আবারও একটি ভয়ঙ্কর ভুল করেন রুপনা, এবারও বল হাতছাড়া হয়। তবে মিয়ানমারের ফরোয়ার্ড শট লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় রক্ষা পায় লাল-সবুজের দল।
প্রথমার্ধে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিরতিতে যায় ১-০ লিড ধরে রেখে। বিরতি থেকে ফিরে আক্রমণ জোরালো করে মিয়ানমার। তবে কিছুতেই বাংলাদেশের রক্ষণ ভাঙতে পারছিল না স্বাগতিকরা।
৬৮তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ক্রস থেকে মনিকা চাকমা পা ছোঁয়ালেও বল চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। তাতেই হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে।
সেই আক্ষেপ মেটাতে সময় নেননি ঋতুপর্ণা। মাঝমাঠ থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে একক প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি। তাতেই ২-০ গোলে লিড নেয় বাংলাদেশ।
৭৭তম মিনিটে আরও একটি সুযোগ পায় মিয়ানমার। গোলরক্ষক রুপনাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেনি স্বাগতিকরা। অবশেষে ম্যাচের ৮৮তম মিনিটে ব্যবধান কমায় মিয়ানমার। মিডফিল্ডার উইন স্কোরশিটে নাম লেখান। বাকি সময়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি তাদের। ২-১ গোলের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে স্বাগতিক মিয়ানমারকে।
এই জয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে খেলার দোরগোড়ায় চলে এলো বাংলাদেশের। বুধবার সন্ধ্যায় ‘সি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে বাহরাইন জিতলেই গ্রুপ সেরা হয়ে মূল পর্বে জায়গা করে নেবে বাটলারের দল।