আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে মায়ানমারের সামরিক জান্তা এখন রাশিয়ার বিনিয়োগ চাইছে। তাদের লক্ষ্য, মায়ানমারকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।
রুশ বিনিয়োগে মায়ানমারের পরিবহন খাতের গুরুত্ব
সম্প্রতি রাশিয়া সফরে গিয়ে জান্তার পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রী জেনারেল মিয়া তুন ওও মায়ানমারের পরিবহন অবকাঠামোর অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, মায়ানমারের বন্দর ও রেলপথগুলো রাশিয়ার পণ্য আঞ্চলিক বাজারগুলোতে পৌঁছানোর মূল কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। বিশেষ করে, রাশিয়া থেকে আসা পণ্য ইয়াঙ্গুনের বন্দরগুলো ব্যবহার করে সড়ক ও রেলপথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে বিতরণ করা সম্ভব।
সেন্ট পিটার্সবার্গ ফোরামে মায়ানমারের প্রতিনিধি দল
১৮ থেকে ২১ জুন অনুষ্ঠিত ২৮তম সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরাম (SPIEF)-এ মিয়া তুন ওও-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এই দলে বিনিয়োগ, বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক, কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য ও পর্যটন মন্ত্রীরা ছাড়াও মায়ানমার চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ফোরামে, মিয়া তুন ওও রাশিয়া ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, বিনিয়োগ প্রচার এবং অবকাঠামো সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি মায়ানমারকে রুশ পণ্যের পরিবহন করিডোর হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দেন মস্কোর কাছে। পাশাপাশি, রুশ বিনিয়োগকারীদের মায়ানমারের বন্দর, রেলপথ ও অন্যান্য বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
রাশিয়া-মায়ানমার সম্পর্ক ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ফেব্রুয়ারিতে নেপিদোয় অনুষ্ঠিত রাশিয়া-মায়ানমার আন্তঃসরকার কমিশনের বৈঠকে জান্তা রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন -এর সাথে যুক্ত হয়ে ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে রাশিয়া মায়ানমার জান্তার প্রধান মিত্র এবং অন্যতম বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী। যদিও বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পর্যটন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আলোচনা চলছে, তবে দৃশ্যমান অগ্রগতি এখনো সীমিত।
চীনের সাথে মায়ানমারের অবকাঠামো সহযোগিতা
রুশ বিনিয়োগের পাশাপাশি, মায়ানমার জান্তা চীনের সাথেও বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চায়না-মায়ানমার ইকোনমিক করিডোর, যা চীনের ইউনান প্রদেশকে মায়ানমারের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত করে। সম্প্রতি, মায়ানমার চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোং মায়ানমারের কৃষি রপ্তানি বাড়াতে ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রাথমিক বিনিয়োগে বন্দর সুবিধা উন্নয়নের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
সুত্রঃ The Irrawaddy