মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলা কি সন্ত্রাস, প্রশ্ন সাংবাদিকের

সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলা, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলা কি সন্ত্রাস করা? যারা এই দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের সঙ্গে থাকা সন্ত্রাস করা? দেশের সূর্য সন্তানরা এ দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো কি সন্ত্রাস?

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, এই দুই হাত দিয়ে আমি লিখি। সাংবাদিকরা কী লিখবে, কার পক্ষে লিখবে— বলুন আপনারা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লিখি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখি। এ হাত দিয়ে লেখাকে কি আপনারা সন্ত্রাস মনে করেন?

এর আগে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন ‘মঞ্চ ৭১’ এর অনুষ্ঠানে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তদের মবের শিকার হওয়া সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ‘দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়া এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

কারাগারে পাঠানো অপর আসামিরা হলেন- আব্দুল্লাহ আল আমিন (৭৩), শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন (৫৫), কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল (৭২), গোলাম মোস্তফা (৮১), মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু (৬৪), জাকির হোসেন (৭৪), তৌছিফুল বারী খাঁন (৭২), আমির হোসেন সুমন (৩৭), আল আমিন (৪০), নাজমুল আহসান (৩৫), সৈয়দ শাহেদ হাসান (৩৬), শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (৬৪), দেওয়ান মোহম্মদ আলী (৫০) ও আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম (৬১)।

এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক তৌফিক হাসান তাদের কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শাহবাগ থানার এসআই আমিরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট মামলাটি করেন।

প্রসঙ্গত, ডিআরইউ’র শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ‘মঞ্চ ৭১’। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধ, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গঠিত এই প্ল্যাটফর্মের প্রথম কর্মসূচি ছিল অনুষ্ঠানটি।

আলোচনায় প্রথম বক্তা হিসেবে অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের সংবিধান ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। এর পেছনে জামায়াত-শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জড়িত। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছেন।’

তার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই একদল যুবক স্লোগান দিতে দিতে মিলনায়তনে প্রবেশ করে মব সৃষ্টি করে। তারা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা এক হও, লড়াই করো’—এমন স্লোগান দিতে থাকে এবং গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ এসে তাদের হেফাজতে নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ‘জুলাই যোদ্ধা’ ব্যানারে আল আমিন রাসেলের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক অনুষ্ঠানে উপস্থিত লতিফ সিদ্দিকীসহ অন্যদের ঘেরাও করে রাখেন এবং মিলনায়তনে তাদের অবস্থান ঠেকানোর চেষ্টা করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সব দল-মতের মুক্তিযোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমরা অনুষ্ঠান শুরু করেছিলাম। লতিফ সিদ্দিকী সাহেব এসেছেন, কিন্তু কামাল হোসেন সাহেব আসেননি। এর মধ্যে ২০-২৫ জন যুবক হইচই শুরু করে, আমাদের ঘিরে ফেলে।’

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025