নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি মসজিদে মঙ্গলবার হামলা চালিয়েছে বন্দুকধারীরা। এই হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন একজন স্থানীয় বাসিন্দা ও এক আইনপ্রণেতা। এর আগে নিহতের সংখ্যা ১৩ বলে জানানো হয়েছিল।
এএফপি জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে অপরাধী চক্রের সদস্যদের ‘ডাকাত’ বলা হয়। তারা কাতসিনা অঙ্গরাজ্যের মালুমফাশি এলাকার উঙ্গুয়ার মানতাউ শহরে একটি মসজিদে মঙ্গলবার হামলা চালায়। একটি সংঘাত পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা প্রাথমিকভাবে ১৩ জন নিহতের কথা জানায়।
ফজরের নামাজরত মুসল্লিদের ওপর এ হামলা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কাতসিনা অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শান্তিচুক্তি সই হলেও মালুমফাশি সেই তালিকায় ছিল না।
নুরা মুসা নামের একজন বাসিন্দা বুধবার এএফপিকে জানান, ৯ জন মুসল্লি ঘটনাস্থলেই নিহত হন ও আরও অনেকে দিনভর মারা যান। সর্বশেষ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২-এ।
মুসা বলেন, এ হামলার আগে সপ্তাহান্তে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী গ্রামপ্রহরীরা ডাকাতদের একটি দলকে হামলা করে। গ্রামপ্রহরীরা সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত টহল দেয়, ডাকাতদের হাত থেকে গ্রাম রক্ষা করতে। টহল শেষে তারা ভোরে মসজিদে নামাজ পড়তে যান। নামাজরত অবস্থায় হঠাৎ ডাকাতরা হামলা চালায়। তারা মুসল্লিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ছাড়া ডাকাতরা আশপাশের আরো কয়েকটি শহরে হামলা চালিয়ে ‘অনেক মানুষকে’ অপহরণ করেছে বলে জানান মুসা।
কাতসিনা অঙ্গরাজ্যের আইনসভায় মঙ্গলবার স্থানীয় রাজনীতিক আমিনু ইব্রাহিম জানান, হামলায় ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
বছরের পর বছর ধরে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায় ডাকাতচক্র গ্রাম আক্রমণ, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, লুটপাটের পর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
নাইজেরিয়ার এ ডাকাত সংকট মূলত চাষি ও পশুপালকদের মধ্যে জমি ও পানির অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হলেও তা এখন সংগঠিত অপরাধে রূপ নিয়েছে। গরু চুরি, অপহরণ ও কৃষকদের ওপর কর চাপানো—এসব এখন গ্রামীণ দরিদ্র এলাকায় তাদের বিশাল অর্থ আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে, যেখানে সরকারের উপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় নেই।
যেসব সম্প্রদায় শান্তিচুক্তি করে, সেখানেও অনেক সময় চুক্তি ভঙ্গ হয়। ডাকাতরা প্রায়ই অস্ত্র নিজেদের কাছেই রাখে ও শান্তিচুক্তি এলাকাকে আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে, পাশাপাশি অন্যত্র হামলা চালাতে থাকে।
কাদুনা অঙ্গরাজ্যের বিরনিন গুয়ারি জেলায় গত নভেম্বরে শান্তিচুক্তির পর নিরাপত্তা কিছুটা উন্নত হলেও পার্শ্ববর্তী কাতসিনা ও নাইজার অঙ্গরাজ্যে ডাকাত হামলা বেড়েছে।
আইনপ্রণেতা ইব্রাহিম বলেন, অবস্থা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ লাগাতার হামলার কারণে মানুষ আর নিজেদের গ্রামে থাকতে পারছে না।