ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়াল

চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজায় চলছে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান। এসব অভিযানে নিহতের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করার পর থেকে গাজায় কমপক্ষে ৭০ হাজার ১০০ জন নিহত হয়েছেন, যা গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার ৩ শতাংশের বেশি। আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৭০ হাজার ৯৮৩ জন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল রবিবারও ইসরায়েল পূর্ব রাফায় চারজনকে হত্যা করেছে। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসার পরই তাদের হত্যা করা হয় বলে স্বীকার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গতকাল রাফায় বিমান হামলাও হয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে তথাকথিত হলুদ রেখার পেছনের অঞ্চলে কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছে। রাফার পূর্বে সামরিক বিমান ছয়টি অভিযান চালিয়েছে। মধ্য গাজার বুরেইজ ক্যাম্পেও হামলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ফিলিস্তিনিদের আটক করা হয়েছে।

গত ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল ৫০০ বারের বেশি হামলা চালিয়েছে। এই সময়ে নিহত হয়েছেন ৪০০ জনের বেশি। এরই মধ্যে গাজার বাসিন্দারা ক্ষুধা, বন্যা এবং তীব্র শীতের মুখে পড়েছেন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম জানিয়েছে, দুই বছরের যুদ্ধে গাজার জনসংখ্যার আনুমানিক ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১৫ লাখের বেশি মানুষের জরুরি আশ্রয় সহায়তা প্রয়োজন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে ১০ হাজারের বেশি মৃতদেহ। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, ইসরায়েল এখনও গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। পর্যাপ্ত খাদ্য না প্রবেশ করতে পারলে মানবিক পরিস্থিতি ভয়ানক হবে। সামরিক নিয়ন্ত্রণে ‘নতুন গাজা’ গঠনের পরিকল্পনার রূপরেখা প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। রাফা থেকে শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় একটি ‘নতুন গাজা’ নির্মাণ করা হবে। খান ইউনিস ও উত্তর গাজায় অনুরূপ শিবির তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাতে।

কাতার বলেছে, প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনীসহ গাজার অভ্যন্তরে যে কোনো নিরাপত্তা অভিযান ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্বে হতে হবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে ইসরায়েল বাধা দিচ্ছে।

চলমান দুর্নীতির মামলার মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে করা দুর্নীতির তিনটি পৃথক মামলা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল লন্ডন, জেনেভা, রোম ও লিসবনেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডনে এক লাখেরও বেশি মানুষ বিক্ষোভে যোগ দেন।

সীমাহীন কষ্ট নিয়ে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন মায়েরা

গাজার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যুদ্ধের মধ্যে শত শত অন্তঃসত্ত্বা নারী ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। তারা ভীষণ কষ্টের মধ্যে সন্তান জন্ম দেন। এমনকি কোনো হাসপাতালে যেতে প্রসূতিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে আসতে হচ্ছে। অথচ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যাতায়াতের জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগত।

গাজা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু

গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংস হওয়া ভবনেই সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। ফাটল ধরা ভবনের মধ্যেই শত শত শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে ফিরে এসেছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের মতে, ইসরায়েলি গণহত্যায় ১৬৫টি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। ৩৯২টি প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা গাজার শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের নিন্দা পাকিস্তান ও তুরস্কের

গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েল ‘মিথ্যা’ অজুহাত দেখিয়ে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘন করে চলেছে।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025