ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

কুমিল্লার সদর দক্ষিণে বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় স্ত্রীর সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে আবু বক্কর প্রকাশ আসিফ নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মরদেহ নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সৈয়দপুর এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম মডেল থানা ও মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ গিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ জনতা অবরোধ তুলে নেয়।

নিহত আসিফ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের কেন্ডা গ্রামের মৃত ফটিক মিয়ার ছেলে। নিহত আসিফের পরিবারের দাবি, নববধূর (১৯) সাবেক প্রেমিক রাব্বি প্রকাশ বাপ্পি নামে এক যুবক তার শরীরের বিভিন্নস্থানে ছুরিকাঘাতে আহত করে।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর আসিফ সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের শ্বশুড়বাড়িতে বেড়াতে গেলে দুই ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি) মারা যান।

নিহতের ছোট ভাই আরাফাত হোসেন বলেন, আমার ভাই দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। ছুটিতে দেশে এসে গত ২৭ অক্টোবর সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামে বিয়ে করেন। গত ৮ নভেম্বর দুপুরে ভাই নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুড়বাড়িতে বেড়াতে যান। একই দিন সন্ধ্যায় শ্যালকসহ ভাই অলির বাজার এলাকায় ঘুরতে যান। পরে বাড়ি ফেরার পথে বাপ্পি ও পারভেজ নামে দুই যুবক আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে।

তিনি আরও বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পিজি হাসপাতালে নেওয়া হলে শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আমরা পরে জানতে পারি, বাপ্পি নামের এক যুবকের সঙ্গে ভাবির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনিও জড়িত রয়েছে।

আরাফাত বলেন, ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে ভাবি সদর দক্ষিণ থানায় ছুরিকাঘাতের একটি মামলা করে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই। এ ঘটনায় আমরা আদালতে ভাবিকে আসামি করে হত্যা মামলা করব।

জানা গেছে, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নিহত আসিফের পরিবার ও এলাকাবাসী মরদেহ নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সৈয়দপুর এলাকায় অবরোধ করে। এ সময় বিশাল এক বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহাসড়কের দুই দিকে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম মডেল থানা ও মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ গিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ জনতা অবরোধ তুলে নেয়।

এলাকাবাসী দাবি, নববধূর প্ররোচনায় তার সাবেক প্রেমিক ও তার সহযোগী আসিফকে হত্যা করেছে। ঘটনাটির ভিন্নখাতে প্রবাহিত এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি মামলা করেছে।

মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য দেন নিহত আবু বক্কর আসিফের মা আলেয়া বেগম, নানি রুপিয়া বেগম, স্থানীয় তোফায়েল আহমেদ জুয়েল, অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম সুমন, মোজাম্মেল হক অপু, শহীদ মিয়া, আনোয়ার হোসেন, এয়াছিন মিয়া, মফিজ মেম্বার, রফিকুল ইসলাম, রাশেদ মিয়া।

অভিযোগ সম্পর্কে নববধূর বাবা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার মেয়ে কোনোভাবেই জড়িত নয়। বিয়ের আগে আমার মেয়ের সঙ্গে কারও প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। আমার মেয়ে মোবাইলও ব্যবহার করত না। আমি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। আসিফের মৃত্যুর ঘটনাটি সদর দক্ষিণ থানার। তার স্বজনরা দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে চৌদ্দগ্রামের সৈয়দপুর এলাকায় অবরোধ করে। বিষয়টি পুলিশ মহাপরিদর্শক ও কুমিল্লা পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। আমরা দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয়।

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ঘটনার পর পরই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আমরা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025