সারাদেশে মোবাইল ফোন বিক্রির দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা

স্মার্টফোন ও গ্যাজেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি) সারাদেশে মোবাইল ফোন বিক্রির দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, সুমাশটেকের প্রধান নির্বাহী আবু সাঈদ পিয়াসকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নেওয়ার প্রতিবাদেই তাদের এই কর্মসূচি।

বক্তারা বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি পিয়াসকে আজকের মধ্যে মুক্তি না দিলে তারা সারা দেশে কঠোর আন্দোলনে নামবেন।’ একইসঙ্গে তারা ‘দেশ অচল’ করে দেওয়ার হুমকিও দেন।

কর্মসূচি ঘোষণার সময় বক্তারা আরও বলেন, ‘সুমাশটেকের প্রধান নির্বাহী আবু সাঈদ পিয়াসকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে দেশজুড়ে সব মোবাইল ফোন দোকান বন্ধ থাকবে। অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি পিয়াসকে আজকের মধ্যে মুক্তি না দিলে তারা সারা দেশে কঠোর আন্দোলনে নামবেন।’

মঙ্গলবার গভীর রাতে সুমাশটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাইয়েদ পিয়াসকে ডিবি নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ ওঠে। পিয়াসের স্ত্রী সুমাইয়া চৌধুরী সাংবা‌দিক‌দের জানান, গতরাত ৩টার দিকে মিরপুর-১ এলাকার বাসা থেকে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় ডিবি সদস্যরা পিয়াসের মোবাইল ফোনটিও জব্দ করে বলে জানান তিনি।

এমবিসিবির দাবি, তাদের অ্যাসোসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা পিয়াসকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে, নইলে তারা আরও কঠোর অবস্থান নেবে। ডিআরইউতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা বলেন, এ ঘটনায় ব্যবসায়ী মহলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং সরকারের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করছেন তারা।

এদি‌কে ‎বুধবার সকাল থে‌কে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধ করতে চায় সরকার। কিন্তু বৈধ উপায়ে আনা মোবাইল হ্যান্ডসেটে উচ্চ হারে ট্যাক্স দিতে হবে। এতে কিছু ব্যবসায়ী লাভবান হবে। সেটা যেন না করতে পারে সে জন্য একটা সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এর আগেই বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের নেতা ও সুমাসটেক লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আবু সাঈদ পিয়াসকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে আনার অভিযোগ করেন তারা। তাকে ছাড়িয়ে নিতে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা অবস্থান নেন। ‎

দুপুরে ডিবি কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সহ-সভাপতি শামীম মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে ডিবিতে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁকে এখান থেকে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা বাসায় ফিরব না।’ ‎

এ বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম সাংবা‌দিক‌দের বলেন, ‘তাদের (মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী) প্রতিনিধিদের স‌ঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তবে পিয়াসকে ডিবিতে নিয়ে এসেছেন কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি ডিবির এই কর্মকর্তা।

এর আগে ‎দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আজ সকালে ছেড়ে দেয় ডিবি। সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল বাংলাদেশ অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স (ওইএ) নামে একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

মিজানুর রহমান সোহেল ব‌লেন, ‘কী কারণে আমাকে নেওয়া হয়েছে, সুস্পষ্টভাবে তারা (ডিবি) জানায়নি। তবে আজ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার) বিষয়ক একটি সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। আমি এটার পরামর্শক ছিলাম। সংবাদ সম্মেলনটি বন্ধ করতেই আমাকে নেওয়া হয়েছিল বলে ধারণা করছি। তারা আমাকে এই সংবাদ সম্মেলনটির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এর পেছ‌নে একজন উপ‌দেষ্টার হাত র‌য়ে‌ছে ব‌লে ফেসবু‌কে এক পো‌স্টে দাবি ক‌রেন তি‌নি ।

এই ঘটনার স‌ঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

আজ দুপুরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব কথা জানানো হয়।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার) বাস্তবায়ন করছি। অবৈধ হ্যান্ডসেটের লাগাম টানতে সংক্ষুব্ধ পক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠকও করেছে। এত কিছুর পরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো গণমাধ্যম আমার ওপর দায় চাপিয়েছে। তাদের উদ্দেশেই আমার বক্তব্য—এটা অনভিপ্রেত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ করে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকার অবকাশই নেই।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেলকে কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া যায়। তবে এর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে একটি ভিত্তিহীন প্রচারণা চালানো হয়েছে; যা সকালে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেখানে এনইআইআর বাস্তবায়নের সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্যের অপলাপ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই আশা করি, এরপর আর কেউ এ ধরনের লেখায় বিভ্রান্ত হবেন না।’

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মিজানুর রহমান সোহেলকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে একটি ভিত্তিহীন প্রচারণা চালানো হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025