মেসির গোলে মিয়ামির জয়, হারল ইউরোপের চ্যাম্পিয়নরা

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে শুরুটা ভালো হয়নি ইন্টার মিয়ামির। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মিশরীয় ক্লাব আহলির বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগের (এমএলএস) ক্লাবটি। যে কারণে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে দ্বিতীয় ম্যাচে জিততেই হতো মেসিদের। অবশেষে দ্বিতীয় ম্যাচে এফসি পোর্তোর বিপক্ষে লিওনেল মেসির গোলে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে মিয়ামি। পোর্তোকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ ‘এ’ তে টেবিলের দুইয়ে জায়গা করে নিয়েছে তারা।

আরেক ম্যাচে চমক দেখিয়েছে ব্রাজিলের ক্লাব বতাফোগো। তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ইউরোপের জায়ান্ট দল পিএসজিকে হারিয়েছে ১-০ গোলে।

মেসির চোখধাঁধানো ফ্রি-কিক

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেলে মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামে মিয়ামির দ্বিতীয় অর্থাৎ জয়সূচক গোলটি করেন মেসি। চোখধাঁধানো ফ্রি-কিকে গোল করেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।

এ নিয়ে মিয়ামির জার্সিতে ৫০টি গোল করলেন মেসি। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে তাকে এমএলএসের ক্লাবটির হয়ে খেলতে হয়েছে মাত্র ৬১ ম্যাচ। সমান মাইলফলকে যেতে বার্সেলোনার হয়ে ১১৯ ও আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসিকে খেলতে হয়েছে ১০৭টি ম্যাচ।

ম্যাচের ৮ মিনিটেই সামু আগেহোয়ার পেনাল্টি কিকে পোর্তো এগিয়ে যায়। এরপর ৪৭ মিনিটে মার্কেলো ওয়েইগানডের অ্যাসিস্টে গোল করে মিয়ামিকে সমতায় ফেরান তেলাস্কো সেগোভিয়া।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই চাপে থাকা মিয়ামি দ্বিতীয় গোল পায় ৫৪ মিনিটে। দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে গোল করে মিয়ামিকে এগিয়ে দেন মেসি (২-১)। যা আটবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী তারকার ক্যারিয়ারের ৬৮তম ফ্রি-কিক গোল।

পোর্তোর রদ্রিগো মোরা ফাউল করলে মেসি ফ্রি-কিকের সুযোগ পান এবং নিখুঁত শটে পোর্তোর গোলরক্ষক ক্লাউদিও রামোসকে পরাস্ত করে ওপরের ডান কোণ দিয়ে বল জালে ঢুকে পড়ে।

ম্যাচে পোর্তো ১৪টি শট নিলেও মাত্র ৩টি ছিল অন টার্গেটে। আর মিয়ামির ৬ শটের বিপরীতে অন টার্গেটে ছিল ৫টি।

পোর্তোর অভিজ্ঞ গোলরক্ষক রামোস এই ম্যাচে ৩টি সেভ করেন। আগের ম্যাচে পালমেইরাসের বিরুদ্ধে (০-০ ড্র) করেছিলেন ৪টি সেভ। অন্যদিকে মিয়ামির গোলরক্ষক উস্তারি এই ম্যাচে মাত্র ১টি সেভ করেন। যদিও আল আহলির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৮টি দুর্দান্ত সেভ দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক।

এই জয়টি ছিল ফিফা ক্লাব টুর্নামেন্টে ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে কোনো কনকাকাফ ক্লাবের প্রথম জয়। যা মিয়ামির জন্য একটি ঐতিহাসিক সাফল্য।

পিএসজিকে হারিয়ে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের চমক

একদিকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী পিএসজি, যাদের ঝুলিতে মৌসুমের ট্রেবলসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি শিরোপা। অপরদিকে ব্রাজিলিয়ান লিগে হোঁচট খেতে থাকা বতাফোগো। অথচ ফুটবল যে অঘটনের খেলা, তা আবারও প্রমাণ করল ক্লাবটি। ক্লাব বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিল ব্রাজিলের এই ক্লাব।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে ক্যালিফোর্নিয়ার রোজ বোল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। ৩৬তম মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ইগো জেসুসের একমাত্র গোলেই নির্ধারিত হয় ভাগ্য। এই জয়ে টানা দুই ম্যাচ জিতে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে উঠে এসেছে বতাফোগো।

প্রথম ম্যাচে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-০ গোলের দুর্দান্ত জয়ের পর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর পিএসজি দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিল। ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়েও ছিল তাদের একচেটিয়া আধিপত্য। ৭৫ শতাংশ সময় বল ছিল পিএসজির পায়ে। কিন্তু গোলমুখে কার্যকারিতা ছিল একেবারে হতাশাজনক। ১৬টি শট নিয়েও কেবল দুটি ছিল লক্ষ্যে, যেগুলো সহজেই ঠেকিয়ে দেন বতাফোগোর গোলরক্ষক জন।

এর বিপরীতে বতাফোগো তাদের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে জানে। গোটা ম্যাচে মাত্র চারটি শট নেয় তারা, যার সব কটিই লক্ষ্যে। পিএসজির অভিজ্ঞ গোলরক্ষক দোন্নারুম্মা তিনটি ঠেকালেও একটি গোল হতে সময় লাগেনি।
সেই গোলটির নেপথ্যে ছিলেন জেফারসন সাভারিনো। মাঝমাঠ থেকে তার নিখুঁত পাস পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দুর্দান্ত কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান জেজুস। পুরো ঘটনায় যেন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না দোন্নারুম্মার।

প্রথমার্ধে গোল হজম করার পর দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে পিএসজি। একের পর এক আক্রমণে বতাফোগোর রক্ষণভাগকে চেপে ধরে তারা। কিন্তু চমৎকার সংগঠিত বতাফোগো ডিফেন্স তাদের কোনো সুযোগই কাজে লাগাতে দেয়নি। ফলে গত মার্চের পর এই প্রথম কোনো ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হলো পিএসজি।

এই হারের মধ্য দিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিল বতাফোগো। অথচ তাদের ঘরোয়া পারফরম্যান্স একদমই ভালো নয়। হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া ক্লাবটি ব্রাজিলিয়ান লিগে বর্তমানে রয়েছে অষ্টম স্থানে। তবে বিশ্বকাপ মঞ্চে যেন তারা ভিন্ন এক রূপে হাজির হয়েছে।

Tags :

Staff Reporter

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025