প্যারোলে মুক্তি না দেওয়ায় কারাগারের গেটে দাঁড়িয়ে দূর থেকেই শেষবারের মতো মৃত মায়ের মুখ দেখলেন রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও আবেদন নামঞ্জুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা প্রশাসন।
সোমবার (২ জুন) রাত সোয়া ৮টায় কারাফটকেই শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখেছেন তিনি। আসাদুজ্জামান রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে তিনি গ্রেপ্তার হন। এখন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী।
আসাদুজ্জামানের মা সালেহা বেগম ৮০ বছর বয়সে সোমবার বিকেলে মারা যান। স্বজনেরা জানান, তাঁর মৃত্যুর পর বড় ছেলে আসাদুজ্জামানের প্যারোলে মুক্তির জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। তবে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কারাফটকে মৃত মায়ের মুখটি একনজর দেখার।
একটি জেলার কারাগারে থাকা বন্দি বা হাজতি ব্যক্তিদের ওই জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়মানুযায়ী প্যারোলের আবেদন করতে হয়। ফলে নিয়মানুযায়ী আসাদুজ্জামানের পরিবার ওই জেলার এডিএমের কাছেই আবেদনটি করেছিলেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে কুলসুম শম্পা জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় মি. আসাদের ভাই স্বাক্ষরিত প্যারোলে মুক্তির একটি আবেদন পান।
তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৭টায় প্যারোলের আবেদন করা হয়। উনার মায়ের জানাজা ছিল রাত ৯টায়। উনার যে আত্মীয় আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন উনি বলেছেন যে তারা লাশটা নিয়ে কারাফটকে আসতে চান, ওখানেই দেখাবেন।
প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে না এমন কোনো সিদ্ধান্ত প্রশাসনের ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। তবে আবেদন করার পরও কেন আসাদুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে ফোনে ওই প্রস্তাব করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
জানা গেছে, আসাদুজ্জামান রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা সাত ভাইবোন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ ভাই সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আসাদুজ্জামান কারাগারে, অন্য চার ভাইও আত্মগোপনে।
আত্মগোপনে থাকা চার ভাই মায়ের মুখ দেখার সুযোগ পাননি। শুধু এসেছিলেন সালেহা বেগমের তৃতীয় সন্তান আক্তারুজ্জামান। ভাই এমপি হলেও তিনি কোনো রাজনীতিতে জড়াননি। জীবিকা নির্বাহ করেন প্রাইভেট কার চালিয়ে।
স্বজনেরা জানান, বিকেলে বাড়ি গিয়ে মৃত মায়ের মুখ দেখেছেন আক্তারুজ্জামান। তবে নিরাপত্তার সংশয়ে তিনিও অংশ নিতে পারেননি মায়ের জানাজায়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে কয়েদি বা হাজতি ব্যক্তির জন্য প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে পৃথক কোনো আইন নেই। তবে ২০১৬ সালের পহেলা জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে প্যারোল মুক্তি সংক্রান্ত নীতিমালার কথা বলা হয়েছে।
সরকারের জারি করা ওই নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বন্দি কয়েদি বা হাজতিদের প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে হয়। শুধু সাময়িক সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। প্যারোলে মুক্ত ব্যক্তিকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরায় রাখা হবে। কারাগারের ফটক থেকে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিকে পুলিশ বুঝে নেওয়ার পর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই কারাগারে ফেরত দিতে হবে।