যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে বা কাজের জন্য যেতে চাইলে এখন থেকে নতুন এক ধরনের ‘বাধা’ পার হতে হবে। মার্কিন অভিবাসন দপ্তরের কর্মকর্তারা যদি মনে করেন, আপনি ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’, তাহলেই কপাল পুড়বে। পাবেন না মার্কিন ভিসা।
বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। এর আগে মঙ্গলবার এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।
ভিসা আবেদনের পর যেসব বিষয় নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তার মধ্যে ওয়ার্ক বা ইমিগ্রেশন ভিসা পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রমও অন্যতম।
তবে ওয়াশিংটনের এই উদ্যোগে অভিবাসন সংস্থার পাশাপাশি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরাও।
ভিসা আবেদনের নতুন ও সম্প্রসারিত নিরীক্ষা প্রক্রিয়া নতুন এই নীতির আওতায় অভিবাসন কর্মকর্তারা এখন থেকে আবেদনকারীদের ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা পরীক্ষা করবেন। এ ছাড়া আবেদনকারীদের ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার নজির আছে কি না, তাও যাচাই করবেন কর্মকর্তারা।
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা সংস্থার (ইউএসসিআইএস) হালনাগাদ নীতিমালায় এসব কথা বলা হয়েছে।
এর আগে গত জুনে অভিবাসন আবেদনের ক্ষেত্রে নতুন করে ‘সামাজিক মাধ্যম যাচাইকরণ’ যুক্ত করে ট্রাম্প প্রশাসন। ওই নীতি সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম’ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী আবেদন বাতিলের বিধান চালু হতে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যায় রাশ টেনে ধরার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন।
উদ্বেগ-আশঙ্কায় অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা
মার্কিন অভিবাসন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যারন রেইখলিন-মেলনিক এক্স পোস্টে লেখেন, ‘এই শব্দাংশটি (যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী) এর আগে কখনো অভিবাসন আইনে যুক্ত করা হয়নি এবং এর সংজ্ঞা পুরোপুরি ট্রাম্প প্রশাসনের মস্তিষ্কপ্রসূত।’
তিনি এই উদ্যোগকে ‘ম্যাককার্থিইজম’-এর সঙ্গে তুলনা করেন। ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন সংস্থাগুলোর ওপর সমাজতন্ত্রের প্রভাব নিয়ে বড় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় যেখানে-সেখানে বামপন্থীদের ওপর নির্যাতনের নজির দেখা যায়।
হিউস্টন-ভিত্তিক অভিবাসন আইনজীবী স্টিভেন ব্রাউন বলেন, ‘তথাকথিত মার্কিন মূল্যবোধের সংজ্ঞা যে যার সুবিধামতো দেয়। অভিবাসন আইনে এর কোনো উল্লেখ নেই।’
ব্রিগহ্যাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক লিলি লোপেজ সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমার কাছে বড় খবর এটাই, যে তারা সূক্ষ্ম পক্ষপাত ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরজা খুলে দিচ্ছে। এতে তারা (অভিবাসন আবেদনের ক্ষেত্রে) নিজেদের সুবিধামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এটা খুবই উদ্বেগজনক।’
তার মতে, একজন আবেদনকারীকে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ নন এমন প্রমাণ দিতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।