মার্কিন তৎপরতা: ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের গোপন বৈঠক ও রাজনৈতিক চাল

গত কয়েকদিন ধরে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনকে খুব তৎপর দেখা যাচ্ছে। একবার লন্ডন উড়ে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দরকষাকষি করে আসছেন, আবার জামাত, বিএনপি, এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সংবিধান সংস্কার কমিটির আলী রিয়াজের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করছেন। এর পর পরই আলী রিয়াজের কমিটির মেয়াদ আরও এক মাস বেড়েছে।

এসব বৈঠক থেকে যে সম্ভবনা সূত্রগুলো রাজনৈতিক মহলে চাউর হয়েছে তা হলো- তারেক রহমানের সকল মামলা প্রত্যাহার হবে, তিনি দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী হবেন। ড. ইউনূস হবেন প্রেসিডেন্ট। এই সূত্রমতে বিএনপি সরাসরি ইন্টেরিম বিরোধীতা করছে না।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে বাগড়া দিচ্ছে জামাত-এনসিপি। ইতোমধ্যে জামাত আন্দোলনেরও ডাক দিয়েছে।

তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কসোভোতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় সাফল্য পাওয়ায় তাকে বর্তমানে ‘ডিসপুটেড‘ বাংলাদেশে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে রাজনৈতিক হাওয়ার গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের র‍্যাপিড ডিপ্লোম্যাটিক ইন্টারসেপ্টিং কোনও কাজে আসবে না, কারণ তারেক রহমানের দেশে ফেরা এখনও অনিশ্চিত।

ড. ইউনূস যখন লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়াল দিলেন, সেই দিনই তারেকের সকল মামলা প্রত্যাহার হলো সরকারের নির্দেশে। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ আরো যেসব মামলায় সাজা হয়েছিল আদালতের রায়ে তার সবগুলো থেকেই তিনি খালাস পেয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এই মুহূর্তে তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনও ধরনের বাঁধা নেই।

আবার ড. ইউনূস যখন তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করছেন সে সময় দেশে তারেকের মামলা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল হলো। এটাও সরকারের এক পক্ষের নির্দেশে। জামাত নেতা আজহারুল ইসলামের যাবজ্জীবন সাজা মওকুফ হয়ে গেল, অথচ তারেকের মামলা ঝুলেই রইল! বোঝা গেল কিছু?

আবার সরকারের অন্যতম স্টেকহোল্ডার এনসিপির নেপথ্যগুরু ফরহাদ মজহার সাহেব সরাসরি নির্বাচনের বিরোধীতায় মাঠে নেমেছেন। তার মুরিদরা কেউ নির্বাচন চায় না কারণ, এখন নির্বাচনে গেলে তাদের জামানত খোয়াতে হবে। তারা দীর্ঘমেয়াদে সংস্কার চান যেন কয়েকটা বছর অনায়াসে টাকাপয়সা কামিয়ে দল গোছানো যায়।

তারেক রহমান যেন দেশে ফিরতে না পারে অন্যতম ‘কারিগর’ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ২০০৮ সালে তারেক চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়ার আগে তাকে তৎকালিন ইন্টেরিম সরকারের নির্দেশে গ্রেফতার করে এমনভাবে ইন্টারোগেশন করা হয় যাতে তার মেরুদণ্ডের দুটি হাঁড় ভেঙে যায়। তাকে হুইলচেয়ারে বিমানে তোলা হয়েছিল।

সেই ইন্টারোগেশন টিমে সাধারণ অফিসার হিসাবে ছিলেন এখনকার জেনারেল ওয়াকার। এখন তিনি কোনওভাবে চাইবেন না তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হোক। তাই তারেক যেন দেশে ফিরতে না পারে সেই ব্যবস্থা করবেন ওয়াকার।

প্রশ্ন হলো; যেখানে মার্কিনীরা চাইছে বিএনপি ক্ষমতায় আসুক, তারেক প্রধানমন্ত্রী হোক। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনকার বাংলাদেশে যা চায় তা হতেই হয়। এমতাবস্থায় ওয়াকার কতদিন মার্কিন চাপ মোকাবেলা করতে পারবেন? তিনি জানেন তার উপর ভয়ানক চাপ আসবে। তাই ‘বিশেষ প্রয়োজনে’ রাশিয়া সফর করে এসেছেন। এবার এ মাসের শেষে চীন যাচ্ছেন। তিনি চীন থেকে ফিরতে না ফিরতে সাংহাই সামিটে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন পুতিন-মোদী-জিনপিং। বোঝা যাচ্ছে ওয়াকার কেবলাহ বদলে RIC ব্লকে আশ্রয় চাইছেন

মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর আস্থা হারিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার থেকে যা নেওয়ার তা শেষ হয়েছে। এখন তিনি তাদের কাছে গলকণ্ঠ। ছুঁড়ে ফেলতে সময় লাগবে না। এসব বুঝে ইউনূস দ্রুত নির্বাচনের মাস ঘোষণা করেছেন।

অথচ তার অন্যতম ‘অংশীদার’ জামাত নির্বাচনের বিপক্ষে মাঠে নামছে! তার ‘নিজের দল‘ এনসিপি নির্বাচনের তীব্র বিরোধী। এনসিপির নেপথ্য কারিগররা নির্বাচনবিরোধী। আবার বিএনপির চাপে নির্বাচনের মাস ডিক্লেয়ার করতে হয়েছে ইউনূসকে। এরই মধ্যে তারেক রহমানকে নিয়ে সরকার-ওয়াকার দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে।

তাই এই মুহূর্তে ‘তারেক প্রধানমন্ত্রী-ইউনূস প্রেসিডেন্ট‘ এমন সরল সমীকরণের সুযোগ নেই। ফেব্রুয়ারি অনেক দূরে। তার কয়েক মাস আগেই দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক যুদ্ধংদেহী অবস্থা আরও পেঁকে উঠতে পারে। তখন কি হবে কেউ বলতে পারে না। এমনকি বিবদমান পক্ষগুলোও না।

মনজুরুল হক
১৪ আগস্ট ২০২৫

Tags :

Monjurul Haque

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025