সম্প্রতি মালিতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। আল-কায়েদা-সংশ্লিষ্ট জামা’আত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল-মুসলিমিন (JNIM) এবং ইসলামিক স্টেট সাহেল প্রদেশ (ISSP) এর মতো ইসলামপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো দেশের মধ্যাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে সমন্বিত ও ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে। এর জবাবে মালির সশস্ত্র বাহিনী (FAMA), বিদেশি মিত্রদের সহায়তায় জোরদার সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে।
হামলার তীব্রতা ও বিস্তৃতি
গত কয়েকদিনে হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বুধবার (২ জুলাই) মালির সামরিক সূত্র জানায়, সাতটি শহরের সামরিক পোস্টে একযোগে হামলার পর FAMA অন্তত ৮০ জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে। JNIM এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সেনেগাল ও মৌরিতানিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি কায়েস, সান্দেরে, নিওরো ডু সাহেল, গোগুই, মোলোডো এবং নিওনোর মতো অভ্যন্তরীণ এলাকাগুলো এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এই হামলার ব্যাপকতা এবং সমন্বয় চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমাগত হুমকির বিষয়টি তুলে ধরে। JNIM সুনির্দিষ্টভাবে তিনটি সেনা ব্যারাক এবং ডজনখানেক সামরিক অবস্থান দখলের দাবি করেছে।
নিরাপত্তা জোরদার ও মানবিক সংকট
সহিংসতা বৃদ্ধির কারণে কায়েস ও ডিয়োইল-এর মতো এলাকায় আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে, যা বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভয়াবহতা নির্দেশ করে। আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দারা তীব্র গোলাগুলি এবং ব্যাপক আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন।
২০২০ সাল থেকে দেশ শাসনকারী মালির জান্তা আল-কায়েদা এবং আইএসআইএস উভয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত জঙ্গিদের এক দশকের পুরনো বিদ্রোহের সঙ্গে লড়ছে। বর্তমান হামলার ঢেউ দেশের উত্তরাঞ্চলে তুয়ারেগ নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহের দীর্ঘ ইতিহাসের মধ্যেও এসেছে, যা মালির নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সরাসরি সংঘাতের বাইরেও এই সংকটের মানবিক মূল্য অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে যে মালির জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশের বেশি, অর্থাৎ প্রায় ৬.৪ মিলিয়ন মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ৩,৭৮,০০০-এর বেশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ, বিশেষ করে সংঘাত-আক্রান্ত উত্তরাঞ্চলীয় ও মধ্যাঞ্চলে। সহিংসতার কারণে জরুরি পরিষেবাগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ১ হাজার ৯৮৪টির বেশি স্কুল বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৬ লক্ষ শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মালির সরকার বিভিন্ন বিদেশি অংশীদারদের সহায়তায় এই হুমকিগুলোর মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিদেশি শক্তির জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রায়শই স্পর্শকাতর হলেও, FAMA-কে তাদের বিদ্রোহ দমনে সহায়তাকারী বিভিন্ন উপাদানগুলোর উপস্থিতি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। এই সুসংগঠিত এবং অভিযোজনক্ষম জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই মালির অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।