ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা মাহিন সরকার। এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এনসিপি।
সোমবার দুপুরে ‘ডিইউ ফার্স্ট’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ডাকসুর জিএস পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন মাহিন। এরপর রাত ১১টার দিকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাহিন সরকার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নির্দেশক্রমে তাকে পদ ও দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারাদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
পরে রাত ১টার দিকে সাংবাদিকদের পাঠানো বার্তায় সালেহউদ্দিন সিফাত জানান, ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন গ্রহণের আগে মাহিন সরকার দলের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে অনুমতি নেননি। এটি দলীয় শৃঙ্খলার গুরুতর ব্যত্যয় হিসেবে গণ্য হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মাহিন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। সেই আন্দোলনের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে গঠিত নতুন সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এবার ডাকসু নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে প্যানেল দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের শীর্ষ একটি পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মাহিন সরকার। তবে সমঝোতা না হওয়ায় তিনি পৃথক প্যানেলে প্রার্থী হন। যেহেতু এনসিপি বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেলকে সমর্থন দিচ্ছে, তাই মাহিনের প্রার্থিতা ওই প্যানেলের ভোট ক্ষয়ের আশঙ্কা তৈরি করে। এই কারণেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
যা বলছেন মাহিন
বহিষ্কারের ঘটনায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মাহিন সরকার।
সোমবার (১৯ আগস্ট) মধ্যরাতে দেওয়া পোস্টে মাহিন লিখেছেন, ‘আমি তাদের একজন যার হাতে অভ্যুত্থানের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠিত হয়েছিল। অন্তত আমার কথাগুলো বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।‘
মাহিন সরকার লিখেন, ‘মাহিন সরকারের তার অনাগত সন্তানের কাছে বলার মতো গল্প আছে। মাহিন সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে তার রক্ত দিয়ে রাঙিয়েছে। গানপয়েন্টে ৬ জন সমন্বয়কের কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর মাহিন সরকার বলেছিল ‘মানি না’। মাহিন সরকারসহ চারজন সমন্বয়কই বাকি সমন্বয়কদের বৈধতা দিয়েছে। মাহিন সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে ন্যায়বিচারে মাঠে নেমেছিল, কেউ আসেননি পাশে। আজকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই বহিষ্কার করে দিলেন।’
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নিয়ে তিনি লিখেন, ‘গুরুতর আর্থিক অনিয়ম কিংবা চারিত্রিক স্খলনের মতো অভিযোগ থাকে, তার পরও সংগঠনসমূহে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি সে সুযোগও পাইনি, এটা সামগ্রিকভাবে নবগঠিত রাজনৈতিক দলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে গেল।’