সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে লুট হওয়া সকল পাথর তিনদিনের মধ্যে ফেরত দিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পদ্মাসন সিংহ।
শনিবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আল্টিমেটাম দেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা যে তিনদিনের সময়সীমা দিয়েছি, এর মধ্যে যদি লুট হওয়া সকল সাদাপাথর ভোলাগঞ্জ ডাম্পিং সাইটে ফিরিয়ে দেন, তাহলে মামলা হবে না। তিনদিন পর যদি আমরা কারো ক্রাশার মিলে কিংবা বাসার সামনে সাদাপাথর পাই, তবে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা দেবো। আপনারা জানেন, ভিন্নভাবে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ডের মেম্বারদের সাথে আলোচনা হবে কিভাবে প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে লুট হওয়া সাদাপাথর উদ্ধার করা যায়। এমনকি কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও এর পক্ষ থেকে আজ বিকেল থেকে মাইকিং করানো হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেকোনোভাবে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এতে সবার সহযোগিতা কামনা করি।
কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন গোয়াইনঘাট সার্কেলের এএসপি আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার ইকবাল হোসেন, উপজেলার জনপ্রতিনিধি, মিল মালিক সমিতির সদস্যবৃন্দ, পাথর ব্যবসায়ী, এলাকার রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।
১৪ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ
জৈন্তাপুর উপজেলায় উপজেলা প্রশাসন ও টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে ১৪ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় উপজেলার ৪নং বাংলাবাজার ও শ্রীপুর চা-বাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব পাথর জব্দ করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনী, জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ ও বিজিবির সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) দায়িত্বাধীন শ্রীপুর বিওপির সদস্যরা।
অভিযান চলাকালে ৪নং বাংলা বাজার এলাকায় কয়েকটি ক্রাশার মিলে রাংপানি নদীর পাথর মজুদকৃত অবস্থায় জব্দ করে টাস্কফোর্স। পরে উক্ত স্থান থেকে দুই হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এরপর শ্রীপুর চা-বাগানের পাশে মজুদ করে রাখা আরও ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, গত সপ্তাহে ৪নং বাংলা বাজার এলাকায় গত সপ্তাহে জব্দকৃত সাড়ে ৯ হাজার ঘনফুট ও আজ জব্দকৃত ২ হাজার ঘনফুটসহ মোট সাড়ে ১১ হাজার ঘনফুট পাথর রাংপানি নদীতে পুনঃস্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। শ্রীপুর চা-বাগান এলাকা থেকে জব্দ করা ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জাফলংয়ের পিয়াইন নদীতে পুনঃস্থাপন করা হবে।
জাফলংয়ে দুইজন গ্রেপ্তার
গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে পাথর লুটের ঘটনায় করা মামলায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার জাফলংয়ের মামার বাজার এলাকার মৃত শহিদ মিয়ার ছেলে আফজল হোসেন ও লাখেরপাড় গ্রামের মন্তাজ মিয়ার ছেলে জাবেদ আহমদ।
গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে গোয়াইনঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, কিছু দুষ্কৃতকারী গত ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে টানা তিনদিনে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর লুট করে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬০ লাখ টাকা। এ ঘটনায় গত সোমবার ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল মুনায়েম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ২৯)।
অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী জানান, জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে লুট হওয়া পাথরের মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বমোট ২৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত পাথর জিরো পয়েন্টে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
পাথর লুট তদন্তে বিজিবির কমিটি
পাথর লুট প্রতিরোধে তৎপরতা বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে সাদাপাথর লুটপাটে বিজিবি সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও আছে। এসব অভিযোগ উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছে বিজিবি সদরদপ্তর।
শনিবার দুপুরে জৈন্তাপুরের লালাখাল এলাকায় টহল কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব একথা জানান ১৯ বিজিবির সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার।
১৯ বিজিবির সিও দাবি করেন, সাদাপাথর লুটপাটে জড়িয়ে বিজিবি সম্পর্কে অপতথ্য প্রচার হচ্ছে। সাম্প্রতিক লুটপাটের পর বিজিবি সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে জনবল বৃদ্ধিসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে।
গত দুই মাসে বিজিবি পাথর চুরিতে ব্যবহৃত ৬ শতাধিক বারকি নৌকা জব্দসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি দাবি করেন, বিজিবি সার্বক্ষণিক তাদের আওতাধীন এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে। এ কারণেই বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন এলাকায় পাথর লুটপাট করতে পারেনি দুর্বৃত্তরা।
অধিক পরিমাণে প্রশাসনের সাথে সমন্বিত টাস্কফোর্সের অভিযান চালানো হলে সম্প্রতি এত ব্যাপকভাবে লুটপাট সম্ভব হতো না বলেও মন্তব্য করেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শনকালে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোখলেছুর রহমান জানিয়েছিলেন, সাদাপাথর লুটে বিজিবি কোনো অবস্থাতেই তাদের দায় এড়াতে পারে না। তিনি পাথর লুটপাটে প্রভাবশালী রাজনীতিক বা প্রশাসনের বড়কর্তাদের যারা জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনেও বিজিবি সদস্যদের লুটপাটে জড়ানোর তথ্য আসে।