সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ঐতিহাসিক ট্রাফালগার স্কয়ারের অনুষ্ঠিত হয়েছে র্যালি ফর বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুঃশাসন, মব সন্ত্রাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ডাকে সাড়া দিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে কয়েক হাজার মানুষ এসে সমবেত হয়েছিলেন লন্ডনের টাফালগার স্কয়ারে। তিনশ-চারশ মাইল দূরের শহর থেকেও বাস ভর্তি হয়ে মানুষ এসে সমাবেশে যোগ দেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। পোর্স্টমাউথ থেকে এসেছিলেন সত্তরোর্ধ্ব দুইজন। তাদের মধ্যে একজন পোর্স্টমাউথ আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাব আলী বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নয়, বর্তমানে বাংলাদেশে যে অবস্থা এই ইউনূস সরকার শুরু করেছে, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না জানিয়ে মানুষ হিসেবে ঘরে বসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই প্রতিবাদে এসে সমেবত হয়েছি।
এদিন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে আসা ও লন্ডনের বিভিন্ন সংগঠনের মিছিল যখন রাস্তা ধরে এগোচ্ছিল, তখন বোঝার উপায় ছিল না এটি ঢাকার রাজপথ না কি লন্ডন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে লন্ডনে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ ছিল এই র্যালি ফর বাংলাদেশ। বিপুল সংখ্যক নারীও সমাবেশে যোগ দেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারা এই সমাবেশে যোগ দেন। ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেয়া সাবেক এমপি, মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও এই র্যালিতে অংশ নেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হরমুজ আলী বলেন, বাংলাদেশ আজ অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বাংলাদেশ কি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ থাকবে না কি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির হাতে থেকে পাকিস্তানি ভাবধারার বাংলাদেশ হবে? ১৯৭১ সালে এই ট্রাফালগার স্কয়ারে আমাদের পূর্বপুরুষরা সমবেত হয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবি নিয়ে। আর ৫৪ বছর পর আমরা সমবেত হয়েছি সেই স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, আজকের এই সমাবেশ আওয়ামী লীগ আহ্বান করলেও হাজার হাজার প্রবাসী এই ডাকে সাড়া দিয়ে সমেবত হয়েছেন। বাংলাদেশে আজ মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। বাকস্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। মবের নামে দিনে-দুপুরে মানুষ হত্যার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পুরো বাংলাদেশকে একটি অঘোষিত জেলখানায় পরিণত করেছে এই সরকার। আমরা যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এখানে সমবেত হয়েছি। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির বার্তা দিতে এখানে সমবেত হয়েছি।
উল্লেখ্য, ট্রাফালগার স্কয়ার যুক্তরাজ্যের আন্দোলন, সংগ্রাম বা সমাবেশের জন্য ঐতিহাসিক একটি স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৭১ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবিতে এখানে প্রবাসীদের সর্ববৃহৎ সমাবেশ ‘রিকোগনাইজ বাংলাদেশ র্যালি’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিনও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এসে সেখানে যোগ দিয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের মূলধারার গণমাধ্যমসহ বিশ্বের নানা গণমাধ্যমে সেই সমাবেশ প্রচার হয়েছিল এবং বিশ্বজনমত গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল।