২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাডড়িঘর দখল, মন্দির, শ্মশান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্রমাগত হামলা-লুটপাট, হিন্দু নারীদের ধর্ষণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত, যেকোনো সময় অতর্কিত হামলা-খুন এখন প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদশের প্রতিটি অঞ্চলেই এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন।
এই হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ এবং প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) যুক্তরাজ্যের লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে লন্ডন সময় সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্টের ব্যানারে অনশন করেছেন লন্ডনে বসবাসরত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এই প্রতিবাদ ও অনশন কর্মসূচিতে হিন্দুদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধা, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিকসহ অনেকে।

সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্টের মুখপাত্র কাউন্সিলর পুষ্পিতা গুপ্তা বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও বাংলাদেশের মানুষ। জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ধর্ম-কর্ম পালন ও সুবিচার পাওয়া আমাদের নাগরিক অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমরা সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সুবিচার তো দূরের কথা, প্রতিবাদও করতে পারছি না।
তিনি বলেন, চার মূলনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হলেও আমরা নাগরিক অধিকার ও ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায় না। ৪ আগস্ট ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত সংখ্যলঘুদের ওপর ২ হাজার ৪৪২টি হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, ৫০ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে, ২৯ হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্মীয় গুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা এসব অন্যায়ের প্রতিকার চাই। চাই সুবিচার ও আমাদের জানমালের নিরাপত্তা।
এসব বিষয় নিয়ে সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্টের পক্ষ থেকে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দিতে চাইলে প্রথমে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করতে একজন কর্মকর্তা অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে বিকেল ৪টার দিকে হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা স্মারকলিপিটি গ্রহণ
করেন।

বিকেল ৫টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজুর রহমান খান পানি পান করিয়ে কাউন্সিলর পুষ্পিতা গুপ্তার অনশন ভঙ্গ করান ও তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
এ সময় বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দুদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাদের সাথে অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী সৈয়দ এনামুল ইসলাম, আনসার আহমেদ উল্লাহ, সুশান্ত দাশ গুপ্ত ও নিশিত সরকার মিটু।