খালেদা জিয়া ‘বিমান ভ্রমণে সক্ষম নন’

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘বিমান ভ্রমণে শারীরিকভাবে সক্ষম নন’ বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।

শনিবার বিকেলে হাসপাতালের বাইরে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ওই সময়ে (শুক্রবার) এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কারিগরি ত্রুটির কারণে আসতে পারেনি এটাও যেমন সত্য কথা, ওই সময়ে জরুরিভাবে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ওই মুহূর্তে উনার ফ্লাই করা সঠিক হবে না। সেজন্য উনাকে যে বিদেশ নেওয়ার বিষয়টি, সেটি কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে উনাকে (খালেদা জিয়া) কখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া যাবে অথবা নিয়ে যাওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। কাতার আমির তার জন্য রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সও পাঠাচ্ছেন। শুক্রবার প্রথম প্রহরে অথবা ভোরে এই যাত্রা শুরু হবে, এমন কথাও জানানো হয়।

তবে রাতেই জানানো হয়, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। পরে জার্মানি থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনার কথাও জানানো হয়।

এর মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়ার বড় পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান, যিনি তার মেডিকেল বোর্ডেও আছেন।

জাহিদ হোসেন বলেন, বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই উনাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ড যথোপযুক্তভাবে তৈরি মনে করবেন, শারীরিকভাবে মনে হবে যে উনাকে সেইফলি ট্রান্সফার করা যাবে। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার বিমান যাত্রায় আকাশে মানুষের শারীরিক যে পরিবর্তন হয় সেটির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না।

অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত আছে বলেও জানান এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, কিন্তু প্রস্তুত থাকলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি—অর্থাৎ চিকিৎসাগত দিক থেকে—এটি অত্যন্ত প্রাধান্য পাচ্ছে সর্বত্রই। আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন থেকে সম্মানিত চিকিৎসকরা অংশ নিচ্ছেন; সকলে উনার ফিজিক্যাল কন্ডিশনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

জাহিদ হোসেন বলেন, যেহেতু উনার স্বাস্থ্য আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, সেজন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব এটি যেমন তদারকও করছেন এবং এই ব্যাপারে উনি চিকিৎসকদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। দলও সেই অনুযায়ী অধিকার দিচ্ছে।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা গত ৬ বছর ধরে খালেদা জিয়াকে সেবা দিয়ে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বোর্ডের সদস্যরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এবং অত্যন্ত প্রফেশনালি দ্য আর হ্যান্ডলিং দ্য ম্যাটার।

‘গুজবে কান দেবেন না’

খালেদা জিয়াকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়াচ্ছে জানিয়ে সেগুলোতে কান না দিতেও অনুরোধ করেন জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, আমার সোশ্যাল মিডিয়া দেখার সুযোগ হয় না, আমি দেখিও না। কিন্তু কোনো কোনো সময় অনেক গুজব শোনা যায়, অনেকে দিচ্ছে। আমি সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, দয়া করে দেশনেত্রীর প্রতি যদি আপনাদের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ—আপনারা দয়া করে যে ফ্যাক্ট, এর বাইরে কেউ গুজব ছড়িয়ে মানুষকে দয়া করে বিভ্রান্ত করবেন না।

জাহিদ বলেন, এর চেয়েও প্রতিকূল অবস্থা থেকে আল্লাহ উনাকে (খালেদা জিয়া) সুস্থ করেছেন আপনাদের সবার দোয়ায়। আমরাও, মেডিকেল বোর্ড, অত্যন্ত আশাবাদী যে এবারও উনার যে শারীরিক জটিলতা, এটি থেকে আপনাদের দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ইনশাআল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন।

‘দুঃখ প্রকাশ’

হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগী এবং তাদের স্বজনরা কেউ অপ্রত্যাশিত ঘটনার শিকার হলে সে জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, আমরা অনেক আবেগপ্রবণ। আমাদের সহকর্মীদের কারণে হয়তো অনেকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন; সেজন্য যারা একটু মনে কষ্ট পাচ্ছেন তাদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আপনাদের সহযোগিতা চাই এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা সত্যিকার অর্থে উনার চিকিৎসা কার্যকে অব্যাহত রাখা কষ্ট হবে।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025