ভারতের কেরালায় সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত মালয়ালম চলচ্চিত্র ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টান’-এর প্রভাবে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে স্কুল শিক্ষাব্যবস্থায়। সিনেমাটির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কেরালার আটটি এবং পাঞ্জাবের একটি স্কুল তাদের শ্রেণীকক্ষে উদ্ভাবনী বসার ব্যবস্থা চালু করেছে। এর ফলে ক্লাসরুম থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছে ‘ব্যাকবেঞ্চার’ ধারণা। এই নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি মনোযোগ পাচ্ছে এবং শিক্ষকরাও প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর প্রতি সমানভাবে নজর দিতে পারছেন।
রামভিলাসম স্কুলে অভিনবত্বের সূচনা
কেরালার ভালকোমের রামভিলাসম ভোকেশনাল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল (RVHSS) এই শিক্ষাগত উদ্ভাবনের পথিকৃৎ। এই বিদ্যালয়য়ের প্রাক্তন ছাত্রী জি পি নন্দনা সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় কেরালায় ২য় এবং জাতীয় পর্যায়ে ৪৭তম স্থান অর্জন করে স্কুলের সুনাম বাড়িয়েছেন। কিন্তু শুধু একাডেমিক সাফল্য নয়, এই বিদ্যালয়য় এখন শিক্ষায় নতুনত্ব আনার জন্যও পরিচিতি লাভ করেছে।
এই নতুন ব্যবস্থায়, শিক্ষার্থীদের একক সারির আসনগুলো শ্রেণীকক্ষের চার দেয়াল বরাবর সাজানো হয়েছে। এর ফলে প্রতিটি শিক্ষার্থীই সামনের সারিতে বসতে পারছে এবং শিক্ষকের কাছ থেকে সমান মনোযোগ পাচ্ছে।
সিনেমা থেকে শিক্ষায় অনুপ্রেরণা
‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টান’ সিনেমার পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথন জানিয়েছেন, সিনেমাটিতে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের আইডিয়া হিসেবে এই বসার ব্যবস্থাটি দেখানো হয়েছিল। সেই ছাত্রটি পেছনের সারিতে বসে অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এই ধারণা পেয়েছিল। বিনেশ বলেন, “আমি কখনোই ভাবিনি যে এটি এত মনোযোগ পাবে। এটি আমাদের তৈরি কোনো ধারণা নয়, তবে ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি এডুকেশন প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে অতীতে আমাদের শ্রেণীকক্ষে এমন একটি বসার ব্যবস্থা ছিল, যা মাঝখানে হারিয়ে গিয়েছিল।”
বিনেশ আরও জানান, পাঞ্জাবের একটি স্কুলও এই সিনেমা দেখে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এমনকি শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে টুইট করেছেন।

সফলতার প্রমাণ ও ইতিবাচক প্রভাব
প্রধান শিক্ষক সুনীল পি শেখর বলেন, এই নতুন বসার ব্যবস্থা শিক্ষকদের প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দিতে এবং তাদের ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতি ‘ব্যাকবেঞ্চার’ ধারণা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করে দেয় এবং সব শিক্ষার্থীকে অগ্রভাগে নিয়ে আসে। তিনি জানান, আরও অনেক স্কুল এখন এই মডেল গ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
২৯ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রাইমারি শিক্ষক মীরা এই মডেলকে প্রচলিত বসার ব্যবস্থার চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ এবং উৎপাদনশীল বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “আমি শ্রেণীকক্ষের প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি মনোযোগ দিতে সক্ষম এবং তাদের প্রত্যেকের আরও ভালোভাবে যত্ন নিতে পারি। শিক্ষার্থীরাও খুশি, কারণ তারা শ্রেণীকক্ষের সকল শিক্ষার্থীর মুখ দেখতে পায় এবং শিক্ষকের প্রতিও গভীর মনোযোগ দেয়।”
শিক্ষকরা বলছেন, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ের মতো দেশগুলোতে এই ধরনের ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই প্রচলিত আছে, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত আরও ভালো। অনেক বিশেষজ্ঞরা মনেকরেন এই পরিবর্তন শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
সুত্রঃ দা টেলিগ্রাফ অনলাইন