যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা আবেদনকারীদের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে- সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি সেটিংস ‘পাবলিক’ (সবার জন্য উন্মুক্ত) রাখতে হবে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক পোস্টে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
পোস্টে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ও বিনিময় (এক্সচেঞ্জ) কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী, যারা এফ, এম ও জে শ্রেণির নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা আবেদনকারী, তাদের জন্য এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
পোস্টে বিস্তারিত কারণ উল্লেখ করা না হলেও জানানো হয়েছে, ভিসা আবেদনকারীদের পরিচয় যাচাই ও যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার যোগ্যতা নির্ধারণ প্রক্রিয়া সহজ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের এই নতুন নীতি অনুযায়ী, আবেদনকারীদের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত পোস্ট পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব’, সন্ত্রাসী সংগঠন সমর্থন বা অ্যান্টি-সেমিটিক কার্যকলাপ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।

যদি কেউ তাদের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল ‘প্রাইভেট’ রাখেন, তবে সেটিকে তথ্য গোপন করার চেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং এ কারণে ভিসা বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন নিয়মটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের মার্চ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ আন্তর্জাতিক ছাত্রের ভিসা বাতিল করেছে। এদের অধিকাংশ গাজা যুদ্ধের পক্ষে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কিংবা সামাজিক মাধ্যমে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে গ্রিন কার্ডধারী ছাত্ররাও রয়েছেন।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাবেক ছাত্র মাহমুদ খলিলকে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করে ১০৪ দিন ইমিগ্রেশন হেফাজতে রাখা হয়, যদিও তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেওয়া হয়নি।
আরেকটি উদাহরণ তুরস্কের ছাত্র রুমেয়সা ওজতুর্ক, যিনি গাজা নিয়ে একটি সমালোচনামূলক নিবন্ধ লেখার পর হামাস সমর্থনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। যদিও অভিযোগের পক্ষে নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
এই ভিসা বাতিলের নীতিকে ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিভোক’ বলে অভিহিত করা হয়, যেখানে সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট ও অনলাইন কার্যক্রমের ভিত্তিতে ছাত্রদের ভিসা বাতিল করা হয়। বিষয়টি আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে প্রায় ৩০০ ছাত্রের ভিসা বাতিলের বিষয় নিশ্চিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও আইনজীবীরা এই পদক্ষেপগুলিকে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন এবং এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।