হোয়াইট হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা সেবাস্তিয়ান গর্কা একটি নতুন ও বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মতিকে “আমেরিকার কাছে হাঁটু গেড়েছে” বলে মন্তব্য করেছেন। রাশিয়া টুডেতে বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
চুক্তিটি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এক বৈঠকে রবিবার চূড়ান্ত হয়।
এই চুক্তির আওতায় বেশিরভাগ ইউরোপীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এর বিপরীতে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং আগামী তিন বছরে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন জ্বালানি কিনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর যেসব শুল্ক আরোপ হয়েছে, সেসবের কোনো প্রতিদান হিসেবে আমেরিকান পণ্যে ইউরোপ কোনো শুল্ক আরোপ করেনি।
চুক্তিকে ‘ভূ-রাজনৈতিক বিজয়’ আখ্যা দিয়ে গর্কা বলেন, “আমি প্রেসিডেন্টকে এক দশক ধরে চিনি, কিন্তু এই রকম একটি মুহূর্ত—যখন পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং বলেছে, ‘আপনি আমাদের ধরে ফেলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমরা ১৫ শতাংশ শুল্ক মেনে নিচ্ছি’- এটা বিশ্বাস করা কঠিন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি একেবারে স্পষ্টভাবে বলব… আপনি যদি বুঝতে না পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভূ-রাজনীতিতে এমন সব পরিবর্তন আনছেন যার প্রভাব আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছর টিকে থাকবে, তাহলে আপনি একজন মূর্খ।”
চুক্তি ইউরোপজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প উরসুলা ভন ডার লেইনকে সকালের নাস্তায় খেয়ে ফেলেছেন।”
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু চুক্তিটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ বলে আখ্যা দেন। দেশটির ন্যাশনাল র্যালি পার্টির বিরোধীদলীয় নেতা ম্যারি লে পেন একে ‘একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নৈতিক বিপর্যয়’ বলে আখ্যা দেন।
ইতালির বিরোধী নেতারাও চুক্তির বিরোধিতা করেছেন, যদিও প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি একে ইতিবাচক অর্জন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
ফাইভ স্টার মুভমেন্টের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুসেপে কন্তে বলেন, “এখানে একজন বিজয়ী আছেন— যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আর একজন পরাজিত, বরং দুইজন: ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জর্জিয়া মেলোনি।”
ভন ডার লেইন চুক্তিটি রক্ষা করে বলেন, “এটাই ছিল আমাদের পক্ষে সম্ভব সর্বোত্তম সমঝোতা।” তিনি আরও জানান, এই চুক্তির ফলে ট্রাম্পের হুমকি দেওয়া ৩০ শতাংশ শুল্ক এড়ানো সম্ভব হয়েছে।