জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ব আদালতের ঐতিহাসিক রায়

জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘মানবতার জন্য একটি জরুরি ও অস্তিত্বের জন্য হুমকি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত। বাংলাদেশ সময় বুধবার সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের হেগে জলবায়ু ইস্যুতে পরামর্শমূলক মতামত উপস্থাপনে এই রায় প্রদান করেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। মনে করা হচ্ছে, রায়টি জলবায়ু নিয়ে রাষ্ট্রগুলোর আইনি দায়বদ্ধতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, আইসিজের ১৫ বিচারকের এই রায় বাধ্যতামূলক না হলেও আন্তর্জাতিক আইনে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনেক আইনি বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটি ভবিষ্যতের জলবায়ুসম্পর্কিত মামলাগুলোর রূপরেখা নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে।

বিচারক ইউজি ইওয়াসাওয়া বলেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ নিঃসন্দেহে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফল এবং তা শুধু একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ নয়।

রায়ের আগে আইসিজের বাইরে জলবায়ু অধিকারকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন—‘আমরা কী চাই? জলবায়ু ন্যায়বিচার! কখন চাই? এখনই এখনই!’

আন্তর্জাতিক আইনে দেশগুলোর জলবায়ু রক্ষার দায়বদ্ধতা রয়েছে কি না এবং যারা জলবায়ু ব্যবস্থার ক্ষতি করে, তাদের কোনো বিচার হওয়া উচিত কি না—আদালতের কাছে এই দুই প্রশ্ন ছিল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত দুই সপ্তাহব্যাপী শুনানিতে উন্নত দেশগুলো বলেছিল, বিদ্যমান চুক্তি বিশেষ করে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি এই দায়িত্ব নির্ধারণে যথেষ্ট। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশ ও ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো এই বিষয়ে কঠোর ও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা এবং ধনী দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা দাবি করেছিল।

প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখা। কিন্তু বাস্তবে এটি এখনো সম্ভব হয়নি। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক ‘অ্যামিশন গ্যাপ রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে, বর্তমান নীতিগুলো অনুসরণ করলে ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যাবে।

জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। লন্ডনের গ্রান্থাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ৬০টি দেশে প্রায় ৩ হাজারটি জলবায়ুবিষয়ক মামলা দায়ের হয়েছে। তবে সব রায় সমান নয়। যেমন জার্মানির একটি আদালত সম্প্রতি পেরুর এক কৃষক বনাম আরডব্লিউই কোম্পানির মামলা খারিজ করলেও পরিবেশবিদেরা এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে দেখছেন।

লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ২০টি দেশের ওপর কর্তৃত্ব রাখা ইন্টার-আমেরিকান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসও জলবায়ু ইস্যুতে সহযোগিতার পরামর্শ দিয়েছে।

ফিজির পরিবেশকর্মী বিশাল প্রসাদ বলেছেন, এই আদালত দেখাতে পারেন, জলবায়ু বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

আইসিজের রায় উপেক্ষা করা সম্ভব হলেও বাস্তবে বেশির ভাগ দেশই তা করতে চায় না। এর কারণ হিসেবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন, এই মতামত আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে দেওয়া, যা দেশগুলো আগেই মেনে নিয়েছে।

বিশ্ব আদালতের এই মতামতকে অনেকেই জলবায়ু ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মোড় হিসেবে দেখছেন।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025