১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন ও গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার বিরূদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের আহবায়ক রোকেয়া প্রাচী ও সদস্য সচিব এফ এম শাহীন কর্তৃক গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৫ আগস্ট মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধুর শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের হাতে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার চিরন্তন উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শোকাবহ ১৫ আগস্টে সমগ্র জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর আর বেদনাবিধুর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করে আসছে।
এতে আরো বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলকারী ইউনুস সরকার দেশকে অন্ধকারের অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়েছে। এই অবৈধ শাসনামলের অধীনে আমরা প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও মিথ্যা তথ্য প্রচার, যা জাতির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অবজ্ঞা ও অবমাননা।
বিবৃতিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে-
বাঙালি ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর পরিকল্পিত নিপীড়ন এবং সাংস্কৃতিক চেতনা ধ্বংস।
মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি বাতিল, মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা ভাঙচুর, ধানমন্ডি ৩২ ভাঙচুর।
প্রগতিশীল, মুক্ত চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যা, গুম, নির্যাতন ও হয়রানি। নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে নিরীহ মানুষদের হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও সর্বত্রই মামলা বাণিজ্য।
মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, দখল।
গণগ্রেফতার, পুলিশ হত্যাকাণ্ড ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বাড়বাড়ন্ত।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া, সাংবাদিকদের হয়রানি, নির্যাতন, চাকরিচ্যুত ও গ্রেফতার, বাকস্বাধীনতায় পুরোপুরি হস্তক্ষেপ।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাধা, বিশেষ করে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের মর্যাদায় আঘাত।
এই অবৈধ ও স্বৈরাচারী শাসনের নীলনকশা শুধু দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের ধ্বংস ঘটায়নি, বরং মানুষের মৌলিক অধিকার— বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক মুক্তিকে সরাসরি হত্যা করেছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ সশ্রদ্ধ ও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করে—
১. অবৈধ ইউনুস সরকারকে আমরা দায়ী করছি জাতীয় শোক দিবস পালনে বাধা, ইতিহাস বিকৃতি, সাংস্কৃতিক নাশকতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য।
২. সরকারের সকল দমন-পীড়নমূলক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি ও নির্যাতিত জনগণকে ন্যায়বিচার দিতে হবে।
৩. গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি হিংসাত্মক নির্যাতন ও দমনমূলক মনোভাব তীব্র নিন্দার যোগ্য এবং তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৪. ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসসহ সকল সাংস্কৃতিক ও গণতান্ত্রিক অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৫. মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
৬. মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্র হত্যাকারী এই অবৈধ শাসনামল থেকে মুক্তি পেতে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধপরায়ণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার হতে আহ্বান জানাচ্ছি।
৭. অবিলম্বে সাস্কৃতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও প্রহসনমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
আমরা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মশাল আমরা কখনো নিভতে দেব না। দেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। শান্তি, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
বিবৃতি প্রদানকারীদের নাম-পরিচয় নিচে উল্লেখ করা হলো-
বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, শিল্পী ও চিত্রকর
বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তার জামান, জুরি জজ, জেলা আদালত, উপসালা, সুইডেন
অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ড. শ্যামল কুমার দাশ, অধ্যাপক, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, এলিজাবেথ সিটি ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
মো. সাদিক হাসান, উপদেষ্টা, হউকেল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল, নরওয়ে
ইশতিয়াক জামিল, প্রফেসর, বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়, নরওয়ে
আমিনুর রহমান, গবেষক, হউকেল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল, নরওয়ে
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কবি ও কথা সাহিত্যিক
পুষ্পিতা গুপ্ত, সভাপতি, সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট ইউকে
ড. রায়হান রশিদ, ট্রাস্টি, আইসিএসএফ
শেলিনা আফরোজ জামান, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক, উপসালা সিটি কাউন্সিল, সুইডেন
শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ড. এস. এম. মাসুম বিল্লাহ, অধ্যাপক ও গবেষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মিল্টন হাসনাত, কবি ও চিকিৎসক, অস্ট্রেলিয়া
ফজলুল বারি, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
অরুনা বিশ্বাস, অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র পরিচালক
জাকিরুল হক টিটন, সম্পাদক ও প্রকাশক, খবরওয়ালা (বাংলা ও ইংরেজি)
মো. মনিরুজ্জামান, সংগঠক ও চিত্রশিল্পী
বাণী ইয়াসমিন, সম্পাদক, বিবার্তা
খন্দকার ইসমাইল, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
খোর্শেদুল আলম খোশরু, চলচ্চিত্র প্রযোজক
অনামিকা প্রিয়ভাসিনি, মানবাধিকার কর্মী
মুশফিক গুলজার, চলচ্চিত্র নির্মাতা
শাহ আলম কিরণ, চলচ্চিত্র নির্মাতা
ড. মাসুদ পথিক, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
সায়মন সাদিক, চিত্রনায়ক
তৌফিক মারুফ, সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক
আল আমীন বাবু, সংগঠক ও সঙ্গীত শিল্পী
নাহার মমতাজ, সভাপতি, সর্ব ইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু ফাউণ্ডেশন, সুইডেন
ভায়োলেট হালদার, সম্পাদক ও প্রকাশক, সময়ের শব্দ
মুরাদ খান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, র্যাপিড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড, নেদারল্যান্ডস
শায়লা আহমেদ লোপা, সমাজকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মী
ফেরদৌসী হাসান, সমাজকর্মী
দীপান্বিতা রায় মার্টিন, সঞ্চালক ও গণমাধ্যমকর্মী
তুহিন দাস, কবি, আমেরিকা
সাইফ সামস, ইঞ্জিনিয়ার, নরওয়ে
মাহবুবুল হক, গণমাধ্যমকর্মী
অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য, নাট্যকর্মী, চাকরিজীবী
কুতুব হিলালী, কবি ও সাহিত্যকর্মী, সম্পাদক, বাংলালিপি
এলবার্ট খান, নির্মাতা ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, সদস্য “বঙ্গবন্ধু কালচারাল & রিসার্চ ফাউন্ডেশন” (ভারত-বাংলাদেশ)
প্রিয়াঙ্কা এলফফ্রস্ট, সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার
জামশেদ শামীম, অভিনেতা
জুটন চন্দ্র দাস, নির্মাতা
তমাল মাহবুব, অভিনেতা ও পরিচালক
আদিবা জাহান, সমাজকর্মী, ঢাকা, বাংলাদেশ
মনিকা রউনক বাবলী, সঙ্গীত শিল্পী
সাদিকা ইয়াসমিন রচনা, সঞ্চালক, প্রোগ্রাম প্রযোজক ও অ্যাক্টিভিস্ট
তূর্য কাজী, ফ্রিল্যান্স শিল্পী
অর্জুন মান্না, সম্পাদক, nenews.news
জেসমিন চৌধুরী, সোশ্যাল জাস্টিস ক্যাম্পেইনার
রানা মেহের, সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।