জাসদ থেকে জামাত: ডীপ স্টেটের ভরসা

১৯৭১ সালে পরাক্রমশালী সোভিয়েট ইউনিয়ন, প্রতিবেশি ভারত ও পূর্ব বাঙলার জনগণ পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে নতুন স্বাধীন দেশের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ছিলো। ফলত মার্কিন ডিপস্টেট এখানে সুবিধা করতে পারেনি। তারা জাতিসঙ্ঘ ও বিভিন্নভাবে একটি নতুন রাষ্ট্র জন্মের প্রবল বিরোধিতা করে চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করে।

পুঁজিবাদের মরণ ঘনিয়ে আসছে বলে মার্কসের যে সতর্কতা সেটি তারা সিরিয়াসলি নিয়েছে এবং এ বিষয়ে প্রচুর কাজ করেছে। গত শতকের ষাট দশকে পুঁজিবাদকে বাঁচানোর নিত্য নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে সেগুলোর সফল প্রয়োগও ঘটিয়েছে। এক্ষেত্রে লেট ক্যাপিটালিজমের বড় আবিষ্কার ম্যানেজমেন্ট। যেখানে মার্কসীয় তাত্ত্বিককরা হাতও দেননি৷ এটা তাদের পুঁজিপাঠ বা মার্কসীয় রাজনীতি ভুল বোঝার জন্যও ঘটে থাকতে পারে।

সুতরাং এরা কি করলো সেটি মাটি চাপা দেই। আসি মার্কিন ডিপস্টেটের খেলায়। দেশ যখন স্বাধীন হচ্ছিলো তখনও তারা মুশতাকদের দিয়ে চেষ্টা করেছে। সেটাও ফেইল করার পর তারা নতুন অংক কষতে বসলো। সেটা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের মুল সংগঠকদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেয়া। পরিতাপের সাথে বলতে হয় তখন তারা রাজনীতির তথাকথিত রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খানকে পিক করে।

আর তৎকালে ভয়ার্ত পুঁজিবাদ তৃতীয় দুনিয়ায় লাল দিয়ে লাল ঠেকাও পলিসিতে আমাদের লক্ষ্য বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র শ্লোগানে জাসদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে। মানে দুধ এমনিতে সাদা কিন্তু আপনি বলছেন সাদা দুধ। তারা সদ্য স্বাধীন দেশে শুরু করে জ্বালাও পোড়াও, থানা লুট, অগ্নিসংযোগ থেকে পুলিশ হত্যা। মেম্বার চেয়ারম্যান থেকে এমপি হত্যার মাধ্যমে মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে অস্থির করে তোলে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় নেতা। তিনি তার প্রিয় ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেননি তার সহজাত বাঙাল ঔদার্যের কারণে। মার্কিনীরা চূড়ান্ত সফলতা লাভ করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে বিনাশের মাধ্যমে। তার প্রিয়ভাজন ছাত্র নেতাদের বিপ্লবও সাঙ্গ হয়! মিশন কমপ্লিট।

পরবর্তী কালে সামরিক বাহিনী দিয়ে নব্বই দশক তারা রাজত্ব করে বঙ্গীয় পলিটিক্সে। নব্বইয়ের তথাকথিত গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় তাদের এজেন্ডাই বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। কিন্তু আবারও জনগণের শক্তি ঐক্যমতের কারণে একটু হোঁচট খায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। তবুও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো বলে আওয়ামী লীগ সুবিধা করতে পারেনি ৫ বছরের শাসনামলে। এমনকি এই দলটি বুঝতেই পারেনি ডিপস্টেটের চাহিদা ও ক্ষমতা। বাংলাদেশ ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তাক্ষরের প্রথম দল হিসেবে তারা এক ধরণের রাজনৈতিক পরাজয় মেনে নেয়। অন্য দেশের ইতিহাসে যেটি হতো বড় দৃষ্টান্ত।

এরপর ডিপস্টেটের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ বিনাশ মিশন। তার ধারাবাহিকতা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। এবারও হাত ফসকে বেরিয়ে যায় সুযোগ। মূলত শেখ হাসিনার জনগণ সম্পৃক্ততা প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ২০০৭ পর্যন্ত ব্যাপক চেষ্টা করেও তাকে দমাতে পারেনি। উল্টা এতদিনের সমান্তরাল ডিপস্টেট ভারত বেঁকে বসে। ফলত শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন বাংলাদেশ শাসন করার সময় পান। তিনি দেশে বেশকিছু যুগান্তকারী উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আবারও জনগণের মন জয় করতে সক্ষম হোন।

২০০১ থেকে যে দলটির প্রতি ডিপস্টেটের ভরসা ছিলো, সেখান থেকে বেরিয়ে জামাতের ওপর ভর করে। জামাত যেহেতু একটি ইসলামিস্ট রেডিক্যাল পার্টি হিসেবে সাংগঠনিকভাবে বিএনপির চেয়ে এগিয়ে ছিল সেহেতু তাদের দ্বারাই ৫ আগস্টের ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল।

এখন আসি অন্য প্রসঙ্গে। ভারতের ইন্টারেস্টর সাথে মার্কিন ইন্টারেস্টে খুব বেশি ব্যবধান ছিল না বলে তারা একসঙ্গে ৫ আগস্ট ঘটিয়েছে।

প্রবল ক্ষমতাশালী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর যোগ্যতা এই জনগোষ্ঠীর নেই। তাদের নৈতিকতা বিশ্ব পর্যায়ে সর্বনিম্ন। তারা ডলারে দেশ বিক্রি করে দিয়েও কোনো অনুশোচনায় ভুগবে না। সুতরাং এখানে দৃশ্যপট পরিবর্তন খুব কঠিন নয়। যদিও ৫ আগস্টের ঘটনায় ভারত আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে বেকায়দা পড়ে গেছে। সেখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছে।

একটা মজার কাকতাল। মার্কিন ডিপস্টেটের প্রথম চয়েজ ছিল বর্গীয় জ এর জাসদ। দ্বিতীয়টাও বর্গীয় জ জামায়াত। আরও চমকপ্রদ তথ্য দেই আপনাদের যাতে হিসেব মিলে। রহস্য পুরুষ খ্যাত সিরাজুল আলম খানের ফুফাতো ভাই ফরহাদ মজহার। যিনি এই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পলিসিমেকার। আপনাদের রহস্য পুরুষ কি পুরষ্কার পেয়েছিলেন জানেন না! তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দিয়ে বেড়াতেন সম্মানীর বিনিময়ে। সারাজীবন যুক্তরাষ্ট্রে আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। তিনি তৈরি করেছেন আলী রিয়াজকে, যিনি সংবিধান বাতিল করে তার স্বপ্ন পূরণ করার পথে।

এই সরকারের আরও গুরুত্বপূর্ণ পলিসিমেকার ও বাস্তবায়নে তার সরাসরি রাজনীতির ছাত্র রয়েছেন যাদের নাম সঙ্গত কারণে বলছি না। জামায়াত নেতা শফিক সাহেবও জাসদ করতেন। অর্থাৎ এক বৃক্ষের ফল সবাই। সুতরাং বাংলাদেশ ধ্বংসের বীজ রোপন করা হয়েছে বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে। এবং সেটা জাসদের মধ্য দিয়ে।

তথাকথিত রহস্য পুরুষকে সামনাসামনি দুয়েকবার দেখেছি। ২০০৬ সালের দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে দিয়ে বৈকালিক হন্টন সারতেন। তার সাধারণ জীবনযাপন নিয়ে মিথ চালু আছে। তিনি কোনো বাড়িগাড়ি টাকা পয়সা করেননি। এটা আসলে তার দরকার হয়নি। যাদের করে দিয়েছেন তারা করা মানে তিনি করা। আর জনগণের সামনে ত্যাগী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার মোক্ষম সুযোগ কেন নষ্ট করবেন।

যেহেতু আওয়ামী লীগ বৈপ্লবিক কোনো পার্টি নয় সেহেতু তাদের সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি থেকেই যাবে।শুধুমাত্র জনসম্পৃক্তি ও মাঠের রাজনীতিতে তাদের শক্তিমত্তা আবারও প্রমাণ করার সময় এসেছে।

এই যে প্রগতিশীল ভেকধারী সমাজতন্ত্রের কথা বলা খুচরো দলগুলো আছে তাদের ধর্তব্যের ভেতর আনার দরকার নাই। তারা প্রকৃতপক্ষে এনজিও। পশ্চিমা লিবারেল বামদের চাঁদায় চলা ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে তারা যেতে পারবে না।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা ও একটু হলেও ঘাড় ত্যাড়ামি করা সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আওয়ামী একটা অবস্থান আছে। তো সিরাজ দাদা থেকে গফুর চাচা পর্যন্ত আমরা একটা চক্রেই খাবি খাচ্ছি। আমাদের আপাত নিস্তার নাই। কারণ এই চক্রের বিরুদ্ধ পক্ষ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- আমার সিরাজের যেনো কিছু না হয়! আর গফুর চাচাকে আরেক ডিপস্টেট তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় খবর পেয়ে তাকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা শেখ হাসিনা করেছিলেন।

আওয়ামী লীগ সব বুঝে অবৈপ্লবিক দল হওয়ার কারণে ফিডেল চে কিংবা স্টালিন হতে পারছে না।

অনিকেত রহমান
জুন ২০২৫

Tags :

Aniket Rahman

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 15