ইতালি যাওয়ার পথে হত্যা, সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হলো লাশ

ইতালি যাওয়ার পথে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে ইমরান খান (২৫) নামের এক বাংলাদেশি যুবককে। ওই যুবকের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়।

জানা গেছে, মাদারীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন ইমরান। দেশে ভালো চাকরি না পাওয়ায় ইমরান স্বপ্ন দেখেছিলেন ইতালি গিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি করবেন। তবে অবৈধভাবে সেখানে যাওয়ার পথে জলদস্যুদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

ইমরানের পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার তাঁরা এক দালালের মাধ্যমে জেনেছেন, ১ নভেম্বর লিবিয়ার উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকায় জলদস্যুদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ইমরান। পরে তাঁর লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

ইমরান মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে। পরিবারের বড় ছেলে কয়েক বছর আগে মারা যাওয়ায় তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম।

বুধবার সকালে ইমরানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে অনেক লোকজন। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব—সবাই ইমরানের খোঁজ নিতে এসেছেন। ইমরানের বাবা তৈয়ব আলী (৮০) বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে আনতেই হাউমাউ করে কান্না করে দিলেন। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, ‘ছেলের মুখটা দালালে আমাগো দেহায় নাই। খালি বলছে, মারা গেছে।’

তৈয়ব আলীর পাশেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫)। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে তিনি টানা আহাজারি করছেন। বৃদ্ধ মা–বাবাকে সামলাতে গিয়ে নিজেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ইমরানের বোন ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ভাই ছিল। দুইটা ভাই–ই মইরা গেল। এখন আমার মা–বাবা কীভাবে বাঁচবে? এই শিপন খান দালাল আমাদের চাপ দিয়া, ভয় দেখাইয়া টাকা নিছে। বাবার যত জমিজমা ছিল সব বিক্রি করে শিপনকে প্রথমে ২২ লাখ, পরে আরও ২০ লাখ টাকা দিছে। তবুও ওরা আমার ভাইডারে ভালোভাবে ইতালি নিয়ে গেল না। পথেই মাইরা ফালাইল।’

তৈয়ব আলী ও রেহেনা বেগম দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রায়হান খান সাত বছর আগে মারা গেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিপন খানের বাড়ি একই এলাকায়। তিনি ১০ বছর ধরে লিবিয়াপ্রবাসী। নিজ এলাকা ছাড়াও মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেককেই অবৈধপথে ইতালি পাঠান শিপন। তাঁদের দাবি, এক বছরে আদিত্যপুর এলাকা থেকে ৫০ জনের বেশি যুবককে ইতালি পাঠিয়েছেন। তাঁর এ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেন ভাই সেলিম খান। ইমরানের মৃত্যুর পর ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন তাঁরা।

ইমরানের পরিবার জানায়, শিপনের ভাই সেলিম খানের মাধ্যমে ২২ লাখ টাকায় ইমরানকে ইতালি পাঠানোর চুক্তি হয়। গত ৮ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিসর হয়ে তাঁকে লিবিয়ার বেনগাজিতে নেওয়া হয়। সেখানে বন্দিশালায় আটকে রেখে আরও ২০ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্র। পরে ১ নভেম্বর রাতে ইমরানকে নৌকায় তুলে দেওয়া হয়। নৌকা ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই জলদস্যুদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ইমরান। পরিবারের দাবি, ৪২ লাখ টাকা নেওয়ার পরও দালাল চক্র প্রতারণা করে তাদের একমাত্র ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অনুসন্ধান) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ এরই মধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

সূত্র: প্রথম আলো

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025