ইসরায়েলের আগ্রাসন : কী করবে আরব দেশগুলো?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র কাতারে গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল দিবালোকে বিমান হামলা চালায়। তাদের অজুহাত ছিল হামাস নেতাদের হত্যা করা। আগে তেল আবিবই তাদের অনুরোধ করেছিল যেন তারা কাতারে গিয়ে দীর্ঘকালীন শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। ওয়াশিংটনের অনুরোধে দোহা তাদের আতিথেয়তা দিয়েছে। কিন্তু তারপরও তাদের ওপর হামলা হয়। এ হামলা পুরো অঞ্চলের জন্য একটি উচ্চ স্বরে জাগরণের বার্তা হিসেবে কাজ করেছে। তারা উপলব্ধি করেছে– সামরিক শক্তি প্রয়োগের ইসরায়েলের ইচ্ছার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই; এমনকি যেসব দেশ ইসরায়েলের এমন আচরণের বিরোধিতা করে না, তাদের ওপরও হামলা হতে পারে।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত দ্য ক্র্যাডলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, কাতারে ইসরায়েলের হামলার সিদ্ধান্তকে হালকাভাবে নেওয়া হয়নি। কারণ, এর উচ্চ রাজনৈতিক মূল্য রয়েছে। তাহলে ইসরায়েল কেন কাতারে হামলা চালাল? প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল এই বার্তা দেওয়া যে হামাসের জন্য কোথাও ‘কোনো নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ নেই। এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে আশ্রয় না দিতে বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানান।

ইসরায়েল ওই হামলায় শীর্ষ হামাস নেতাদের হত্যা করতে ব্যর্থ হয়। তবু এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে ইসরায়েল। তারা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ওয়াশিংটনের এক মিত্রের ওপর হামলা চালিয়েছে। বিষয়টি একটি জরুরি প্রশ্নকে সামনে আনে। তা হলো, ইসরায়েল যে তুরস্ক, মিসরসহ অন্য দেশগুলোতে হামলা চালাবে না, এর নিশ্চয়তা কী? কাতারের হামলা এটা নিশ্চিত করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্টতা বা ভৌগোলিক দূরত্ব– কোনোটাই হামলা থেকে রক্ষা করে না।

ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লেইটার ফক্স নিউজকে বলেন, ‘যদি আমরা এবার তাদের না পাই, তাহলে পরেরবার আমরা তাদের ধরব।’

এ হামলার মাধ্যমে তেলআবিব অন্য হামাসবান্ধব দেশকে ভয় দেখাচ্ছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে যারা আব্রাহাম চুক্তিতে সই করেছে, তারা বের হয়ে যেতে পারে– এমন ঝুঁকির মধ্যেও তেলআবিব এ উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। দ্বিতীয় কারণটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি সমঝোতার দিকে এগোচ্ছিলেন হামাস নেতারা। ইসরায়েল এ হামলা চালিয়ে কাতারকে তার মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা থেকে সরে আসতে বাধ্য করছে। সেই সঙ্গে তারা হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়াকে হত্যা করতে চেয়েছে।

এ ধরনের পদক্ষেপ কূটনীতিকে লাইনচ্যুত করবে এবং নেতানিয়াহুর জন্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার দরজা খুলে দেবে– যতক্ষণ না তার মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়। এ লক্ষ্য হলো গাজা দখল করা এবং প্রতিরোধ বাহিনীকে (হামাস) নির্মূল বা ওই স্থান থেকে বের করে দেওয়া।

কাতারে হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্কের গুরুত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর ‘অসন্তোষের’ কথা জানান। তিনি এটাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থবিরোধী একতরফা হামলা বলে বর্ণনা করেন। পরে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট জানান, ট্রাম্প বলেছেন, কাতারে এ ধরনের হামলা আর কখনও হবে না।

তথাপি এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যসহ ওই অঞ্চলের সরকারগুলোর সামনে একটি প্রশ্নকে জোরালো করেছে– যদি অন্য কোনো দেশের আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র, তাহলে এসব সামরিক ঘাঁটির প্রয়োজন কী? আর মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা যদি সুরক্ষা দিতে না পারে, তাহলে কিসে সুরক্ষা মিলবে? নেতানিয়াহু যদি ট্রাম্পের অনুমোদন ছাড়াই হামলা চালিয়ে থাকেন, তাহলে আবার যে হামলা হবে না, এমন নিশ্চয়তা কে দেবে? এসব প্রশ্নের উত্তর যত দ্রুত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো পাবে, তত দ্রুত তারা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারবে। কাতারে হামলা মূলত কায়রো ও আঙ্কারার জন্য সতর্কবার্তা।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025