সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MHA) বাংলাদেশি নাগরিক হামজা মোঃ আমির, যিনি ইসলামি বক্তা আমির হামজা নামে পরিচিত, তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ উঠেছে, গত ৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সিঙ্গাপুরের একটি অভিবাসী শ্রমিকদের ডরমিটরিতে তিনি অবৈধভাবে চরমপন্থী বয়ান দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং অন্যান্য জড়িত ব্যক্তিদেরও তদন্ত করছে।
আমির হামজার এই বয়ানকে চরমপন্থী ও বিভেদ সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা সিঙ্গাপুরের সামাজিক সম্প্রীতির জন্য বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর বলে বিবেচিত।
উল্লেখ্য, আমির হামজা ২০২৫ সালে ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি জামায়াতে ইসলামী থেকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে নির্বাচন করবেন।
সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ (ISD)
আমির হামজার অতীত সম্পর্কে অবগত ছিল।
তবে, ৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সিঙ্গাপুরে প্রবেশের
সময় তিনি ভিন্ন নামের পাসপোর্ট ব্যবহার করেন
কে এই আমির হামজা? কথিত সন্ত্রাসী সংশ্লিষ্টতা
আমির হামজার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে চরমপন্থী শিক্ষা প্রচার এবং সন্ত্রাসী সংযোগের অভিযোগ রয়েছে। তার বয়ানে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা ও সহিংসতার প্রচার করার অভিযোগ করা হয়। তাকে বাংলাদেশে সক্রিয় আল-কায়েদা-পন্থী সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল-ইসলাম (AAI)-এর একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
২০২১ সালে, সন্ত্রাসী সংশ্লিষ্টতা, সন্ত্রাস-সম্পর্কিত কার্যকলাপ এবং জঙ্গিবাদ উস্কে দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশি সরকার আমির হামজাকে গ্রেপ্তার করেছিল। অভিযোগ রয়েছে, তার উস্কানিমূলক বক্তব্য বাংলাদেশের সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনাকারী আনসার আল-ইসলাম (AAI)-এর সঙ্গে যুক্ত এক সন্দেহভাজনকে প্রভাবিত করেছিল। আমির হামজা নাকি স্বীকারও করেছেন যে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মীয় শিক্ষার ভুল ব্যাখ্যা করেছেন এবং তার বয়ানের মাধ্যমে চরমপন্থা ছড়িয়েছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং বর্তমানে তার বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ (ISD) আমির হামজার অতীত সম্পর্কে অবগত ছিল। তবে, ৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সিঙ্গাপুরে প্রবেশের সময় তিনি ভিন্ন নামের পাসপোর্ট ব্যবহার করেন এবং সে সময় তার বায়োমেট্রিক তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে ছিল না। তিনি ১০ আগস্ট ২০২৪ সিঙ্গাপুর ত্যাগ করেন। পরে, ১২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে তার বয়ান সম্পর্কে পুলিশি অভিযোগ পাওয়া যায়।
বয়ানে চরমপন্থা ও বিভেদ সৃষ্টিকারী মতবাদ
আমির হামজার বয়ানে চরমপন্থী ও বিভেদ সৃষ্টিকারী মতবাদ প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। তিনি অমুসলিমদের “কাফের” বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী-র বেশ কয়েকজন নেতাসহ কথিত বাংলাদেশি চরমপন্থীদের ধর্মীয় ধার্মিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও উস্কানিমূলক বক্তব্য
তিনি তার বয়ানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করেছেন। আমির হামজা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী বাংলাদেশি সরকারকে “নিপীড়ক” বলে অভিহিত করেন। তার দাবি, সরকার বিরোধিতাকারীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি “ইসলামিক দেশ” হলে বিজয় আসবে।
উল্লেখ্য, আমির হামজা বা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক কেউই সিঙ্গাপুরে বয়ান দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে আবেদন করেননি।
চরমপন্থা ও বিদেশী রাজনীতিতে সিঙ্গাপুরের জিরো টলারেন্স
সিঙ্গাপুর সরকার এই ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। জড়িত সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যার মধ্যে বহিষ্কার, বিচার বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইন (Internal Security Act) এর অধীনে আটক করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সিঙ্গাপুর সরকার ঘৃণা ও চরমপন্থী বক্তব্যের বিষয়ে খুবই কঠোর। তারা কোনো বিদেশি বা স্থানীয় ব্যক্তিকে সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা, বা জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রীতিকে হুমকির মুখে ফেলে এমন কোনো মতামত ছড়ানো বা প্রচার করা বরদাস্ত করবে না। বিদেশিদের সিঙ্গাপুরে তাদের দেশের রাজনীতি আমদানি করা অথবা সেই উদ্দেশ্যে কোনো কার্যকলাপ চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
জনগণের প্রতি সতর্কতা ও সহযোগিতার আহ্বান
জনগণকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, সিঙ্গাপুরে ধর্মীয় কারণ-ভিত্তিক বা রাজনৈতিক আলোচনার জন্য মিসেলেনিয়াস ওয়ার্ক পাস (Miscellaneous Work Pass) আবশ্যক। এছাড়াও, পুলিশের অনুমতি ছাড়া জনসভা আয়োজন বা তাতে অংশগ্রহণ করা একটি অপরাধ।
কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করা সত্ত্বেও, কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি যাচাই প্রক্রিয়া এড়িয়ে সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করতে পারে। তাই জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে এবং কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তি বা কার্যকলাপ নজরে এলে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
সূত্রঃ সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-এর ওয়েবসাইট https://www.mha.gov.sg/