ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই ভয়াবহ সেই জঙ্গি হামলার ঘটনার ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ।
হলি আর্টিজান বেকারি নামে পরিচিত গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটিতে ৯ বছর আগে খাবার খেতে দেশি-বিদেশি অনেকে উপস্থিত ছিল। গল্পগুজবে মশগুল ছিল তারা। রাত ৯টার দিকে অতর্কিতে কয়েকজন তরুণ হলি আর্টিজানে প্রবেশ করে। তারা বিদেশি নাগরিক খুঁজতে থাকে। তাদের মুহুর্মুহু গুলিতে চারদিক কেঁপে ওঠে। দুজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ ২৯ জন নিহত হন।
পরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ অভিযানে নিহত হয় রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামীহ মোবাশ্বীর, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল। ঘটনার পর গুলশান থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। চার বছর তদন্ত শেষে পুলিশ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়। এদের মধ্যে খালেদ ও রিপনকে পলাতক দেখানো হয়। অন্যদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
যাদের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে বড় মিজানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। অন্য সাতজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
মামলাটির ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ে সাতজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
এই সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।
হামলার ঘটনার দুই বছর পর গুলশান ২ নম্বরে ৭৯ নম্বর রোডের সেই বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। বাড়ির প্রবেশপথে একটি শোকবেদী নির্মাণ করা হয়। সেখানেই প্রতিবছর সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। এ ছাড়া ইতালি, জাপানসহ বিভিন্ন দূতাবাস এবং হাইকমিশনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হয়। জঙ্গি হামলায় নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা ডিবির তত্কালীন সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার তত্কালীন ওসি মো. সালাহউদ্দিন আহম্মেদ স্মরণে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সেখানে সমবেত হয়ে শোক ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন।