সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রংপুরের গঙ্গাপড়ায় এক কিশোরকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তারের পর রোববার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ওই ঘটনায় রোববার বিকেলে উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ১৩টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে কিছু লোক। বাধা দিলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় তারা। এ সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হন। খবর পেয়ে দ্রুত সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে নেন। সহিংসতা ঠেকাতে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে— এমন কয়েকটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট শনিবার বিকেলে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে সেদিন সন্ধ্যায় বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রাম থেকে অভিযুক্ত কিশোরকে (১৭) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই কিশোর রংপুরের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা আরও জানান, ওই ঘটনার জেরে রোববার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া এবং পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাংলাবাজার হাটে মাইকিং করে ঘোষণা দেওয়া হয়, আলদাদপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী খিলালগঞ্জ বাজারে তারা একটি মানববন্ধন করবেন এবং তারা শুধু গঙ্গাচড়া উপজেলা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ মিছিল করবেন, কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা করা হবে না। কিন্তু বিকেলের দিকে স্থানীয় খিলালগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকে। সেখান থেকে একটি মিছিল আলদাদপুর গ্রামের দিকে যায়। গ্রামে প্রবেশ করে মিছিলটি হঠাৎই সহিংস রূপ নেয়। এ সময় উত্তেজিত লোকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ১৩টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, হামলাকারীরা বাড়িঘরের দরজা-জানালা, আসবাব, ঘরের চালসহ বিভিন্ন মালপত্র ভাঙচুর করেছে। লুট করে নিয়ে গেছে কাপড়চোপড়, টাকা এবং গৃহপালিত ছাগলসহ অন্যান্য সম্পদ।
হামলা ও ভাঙচুরের শিকার কালিদাস শর্মা বলেন, ‘যে অন্যায় করেছে, আমরাও চাই তার শাস্তি হোক। কিন্তু যেভাবে আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হলো, এটা মেনে নিই কীভাবে! আমাদের ক্ষতি করে কী লাভ হলো। সরকার যেন এ বিষয়টি দেখে।’
বিন্দু রানী মোহন্ত বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ছিল আমাদের বাড়িতে হামলা হবে না। আমরা বাড়ি থেকে কিছু সরাইনি। ওরা ঘরে ঢুকে বাক্স ভেঙে সব নিয়ে গেছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত সুবল চন্দ্র বলেন, ‘তারা আমার বাড়িঘর ভেঙে ফেলেছে। এ সময় আমি জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যাই। ওরা চলে যাওয়ার পর এসে দেখি আমার বাড়িঘর তছনছ করে ফেলেছে। এখন কার কাছে বিচার চাইব!’
সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ডিভিশনের ৩০ বেঙ্গলের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবু সাজ্জাদ নোয়াব বলেন, ‘ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করছে।’
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘এখানে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। যে ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, ‘আটকের পর ওই কিশোরের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরকে সাইবার সুরক্ষা আইনের মামলায় আদালতে তোলা হলে রোববার বিকেলে আদালতের বিচারক অনুপ কুমার তাকে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।