গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গাজার উঁচু ভবনগুলো

ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। উপত্যকার যে কয়েকটি ভবন অবশিষ্ট আছে, এবার সেগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রবিবার গাজা সিটির সুসি টাওয়ার নামের বহুতল আকাশচুম্বী ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা ছিল শহরটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ভবন। গাজায় ত্রাণ সরবরাহ আটকে অনাহার-অপুষ্টিতে হত্যার পাশাপাশি এসব হামলায়ও প্রতিদিনই প্রাণহানি বাড়ছে। এ অবস্থায় রবিবার ইসরায়েলের হামলার ২৩ মাস পূর্ণ হয়।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক্সে ভবন ধসের ভিডিও পোস্ট করেন ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, সুসি টাওয়ারটি হামাস ব্যবহার করছে।

বিবিসি জানায়, গত শনিবার হামলা চালিয়ে ভবন ধ্বংসের আগে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরে যেতে বলে আইডিএফ। তারা বারবার ফিলিস্তিনিদের গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যেতে উৎসাহিত করছে। সেখানে চিকিৎসাসেবা, পানি ও খাবার সরবরাহ করা হবে বলেও জানাচ্ছে।

তবে এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে ইসরায়েলের এক মন্ত্রী দক্ষিণ গাজার একটি সংকীর্ণ এলাকায় সব ফিলিস্তিনিকে একসঙ্গে রাখার প্রস্তাব দেন। অনেকে এটাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’র সঙ্গে তুলনা করেন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসি এলাকার আশ্রয়শিবিরে এমনিতেই উপচে পড়া ভিড়। এসব তাঁবুতে মানুষ জরাজীর্ণ পরিবেশে অনিরাপদ জীবনযাপন করছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় হাসপাতালগুলোতে আহত, অসুস্থদের উপচে পড়া ভিড়। গত মঙ্গলবার আল-মাওয়াসিতে পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচ শিশু নিহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাদের ওপর ইসরায়েল ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। আইডিএফ বলছে, এ ঘটনা তারা ‘পর্যালোচনা’ করবে। কার্যত গাজা এ ধরনের সশস্ত্র নৃশংসতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

সুসি টাওয়ারটি গাজা সিটির দ্বিতীয় ধ্বংসপ্রাপ্ত বহুতল ভবন। গত শুক্রবার আরেকটি বহুতল ভবন ধ্বংস করা হয়। সামাজিক মাধ্যমে ফুটেজে দেখা যায়, শহরের আল-রিমালপাড়ায় মুশতাহা ভবনটি বিশাল বিস্ফোরণের পর ভেঙে পড়ে। ওই ভবনে অনেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ছিলেন। তাদের আবারও বাস্তুচ্যুত করা হয়।

গাজা শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক টাওয়ার ব্লকগুলো শহরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করে, যা ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ও একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের আশার সঙ্গে জড়িত। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি সইয়ের পর থেকে পাঁচতলারও বেশি বহুতল টাওয়ারের উত্থান শুরু হয়। ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নির্বাসন থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরের কিছু অংশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।

আবারও স্থানান্তরের চক্রান্ত, বলছেন বিশেষজ্ঞ

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা সিটির ওপর এমন হামলার পেছনে ইসরায়েলে বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। তারা চাচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের উত্তরের দিকে নিয়ে যেতে। দোহা ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক তামের কারামাউত আলজাজিরাকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল গাজায় একটি ‘স্থানান্তর প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, তারা পিছপা হচ্ছে না। তাদের রাজনৈতিক আচরণ, বক্তব্য, স্থলভাগে কর্মকাণ্ড– সবকিছুই এক দিকে যাচ্ছে। আর তা হলো, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমি থেকে বিশাল আকারে অন্যত্র স্থানান্তর।

অধ্যাপক তামের বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহর ইসরায়েলের আক্রমণে মানবশূন্য হয়ে পড়েছে। গাজার তৃতীয় বৃহত্তম শহরটিকে ইসরায়েল বাফার জোনে পরিণত করেছে। শহরটি আর নেই। যদি গাজা শহরকে আরেকটি রাফায় পরিণত করার ধারণা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। গাজা উপত্যকা প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

এক দিনে আরও ২১ জন নিহত

গাজার শরণার্থী শিবির, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলায় গতকাল রবিবার এক দিনে আরও ২১ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে গাজা সিটিতে। এদিন অনাহারে প্রাণ গেছে আরও পাঁচজনের। এতে ২৭ মের পর অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৮৭ জনে পৌঁছাল। এদের মধ্যে ১৩৮ শিশু রয়েছে।

আগের দিন শনিবার ৮৭ জন নিহত হন। আহত হন ৪০৯ জন। গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৩৬৮ জন নিহত ও এক লাখ ৬২ হাজার ৭৭৬ জন আহত হয়েছেন। উপত্যকায় প্রতিদিনই লোকজন অনাহারে-অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছেন।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025