গৃহযুদ্ধের মাঝেই এলো নির্বাচনের ঘোষণা

গৃহযুদ্ধের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। সোমবার (১৮ আগস্ট) দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ, বিরোধীদের প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে এই নির্বাচনকে বিশ্লেষকরা সরাসরি ‘প্রহসন’ আখ্যা দিচ্ছেন।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। তারা দাবি তোলে, আগের নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছিল—যদিও কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এরপর থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ, যা এখনো থামেনি। বিদ্রোহী ও গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠী এখনো বহু অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং এসব এলাকায় নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের ক্ষমতা ধরে রাখা। তিনি প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান কিংবা নতুন কোনো পদে থেকে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে চান। রাখাইনের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এই নির্বাচন জনগণের জন্য নয়, কেবল সামরিক স্বৈরশাসকদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য।’

জাতিসংঘও এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ‘প্রতারণা’ আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি কেবল সামরিক শাসনকে নতুন রূপে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা। এদিকে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি এখনো কারাগারে বন্দি, আর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত বহু আইনপ্রণেতা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

গত জুলাইয়ে জান্তা সরকার নির্বাচনবিরোধী সমালোচনা ও বিক্ষোভ ঠেকাতে কঠোর আইন পাস করেছে। এতে নির্বাচনের সমালোচক বা বিক্ষোভকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ভোটকেন্দ্র বা ব্যালট পেপার নষ্ট করা কিংবা নির্বাচনকর্মীদের ভয় দেখানোর অপরাধে সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ, আর জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নতুন করে দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়েছেন। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো গত বছর থেকে সমন্বিত আক্রমণ চালিয়ে একাধিক এলাকা দখল করলেও, জান্তা পাল্টা বিমান হামলা চালিয়ে এবং বাধ্যতামূলক সেনাসেবা চালু করে আংশিক নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে।

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘২৮ ডিসেম্বর সংসদীয় প্রত্যেক আসনের জন্য বহু দলীয় সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী ধাপের তারিখ পরে জানানো হবে।’ তবে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, নির্বাচনের সময় সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা আরও বেড়ে যেতে পারে।

সবমিলিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় সব সময়ই সেনাশাসনের অধীনে থাকা মিয়ানমারে এবারও নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025