২১ ঘণ্টা পরও উদ্ধার হয়নি গর্তে পড়া শিশু

রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের একটি পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে গেছে দুই বছরের শিশু স্বাধীন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের একটি জমিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

গর্তটির গভীরতা প্রায় ৩৫ ফুট। ঘটনার ২১ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট টানা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফায়ার সার্ভিস জানায়, তখনও শিশুটি জীবিত ছিল। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে।

এদিকে রাতভর ও ভোর থেকে এলাকাবাসীর ভিড় বাড়ছে উদ্ধারস্থলে। সবার মুখে একটাই আশার কথা—শিশুটি যেন জীবিত ফিরে আসে। স্থানীয় প্রশাসন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস টিম—সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে গর্তের প্রায় ২৫ ফুট পর্যন্ত খনন করা হয়েছে; আরও প্রায় ১০ ফুট খনন কাজ সম্পন্ন হলে শিশুটির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গর্তে পড়ে যাওয়া শিশুটির নাম স্বাধীন (২)। তার বাবা রাকিব উদ্দীন একই গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও জালাল উদ্দীন জানান, দুপুরের দিকে জমিতে আটকে যাওয়া একটি ট্রলি দেখতে রাকিব ও তার স্ত্রী তাদের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে যান। এ সময় স্বাধীন মায়ের কোলে থেকে নেমে হাঁটছিল। হঠাৎ পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের খোলা গর্তে পড়ে যায় সে।

তারা আরও বলেন, শিশুটির মা-বাবা নিজ উদ্যোগে উঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। স্থানীয় লোকজনও তাদের সহযোগিতা করছে।

শিশুটির মা রুনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ট্রলিটার দিকে তাকাতে গিয়েছিলাম। আমার বাচ্চা কোল থেকে নেমে পড়ে যায়। গর্তের ভেতর থেকে ‘মা, মা’ বলে কান্নার শব্দ শুনেছি। আমি তাকে খুঁজছি, কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না। আল্লাহ, আমার ছেলেকে আমাকে ফিরিয়ে দাও।” এতটুকু বলতে বলতেই তিনি ভেঙে পড়েন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নলকূপের মালিক তাহের দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ডিপের পাইপটি মুখ খোলা অবস্থায় রেখেছিলেন। কোনো সতর্কতামূলক চিহ্ন না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তানোর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আব্দুল রউফ বলেন, বাচ্চাটি উদ্ধারের জন্য ৫ ঘণ্টা ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ সহায় হলে বাচ্চাটি জীবিত উদ্ধার করা যাবে। ২১ ঘন্ট হলো উদ্ধার কাজ চলছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একটি টিম নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী থেকেও এসেছে এই উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করা জন্য। এখন দেখা যাক শিশুটি জীবিত আছে কি না!

তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। সবাই দোয়া করুন, বাচ্চাটি যেন উদ্ধার হয়ে মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025