অস্থির হচ্ছে বৈশ্বিক পানি চক্র, বাড়ছে হুমকি

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গ্লোবাল পানি চক্র ক্রমেই অনিয়মিত ও অস্থির হয়ে উঠছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে অর্থনীতি, জনজীবন এবং পরিবেশে। বাড়ছে খরা ও বন্যার সংখ্যা, যা মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

পানি চক্র হলো পৃথিবীর চারপাশে পানির চলাচলের প্রক্রিয়া। নদী ও জলাধার থেকে বাষ্পীভূত পানি বায়ুমণ্ডলে উঠে আসে, এবং তা বৃষ্টি বা তুষারের মাধ্যমে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ‘State of Global Water Resources ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন পানির চলাচলকে এলোমেলো করেছে। ২০২৪ সালে বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নদী অববাহিকায় স্বাভাবিক পানি সরবরাহ দেখা যায়নি। কোথাও পানির স্তর অত্যধিক, আবার কোথাও অভাব, এ দুই অবস্থার মধ্যে দোদুল্যমান ছিল।

প্রতিবেদনের প্রধান লেখক স্টেফান উহলেনব্রুক জানিয়েছেন, “গরম ও খরার মাঝেও একাধিক বন্যা দেখা গেছে। ইউরোপ ২০১৩ সালের পর সবচেয়ে বড় বন্যার শিকার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন হেলেন কমপক্ষে ২৩0 জনের প্রাণ নেয়। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় বন্যায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা গেছে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমবাহ গলতে থাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে এবং বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। টানা তৃতীয় বছরের মতো হিমবাহ বিপুল পরিমাণ বরফ হারিয়েছে। মোট ৪৫০ গিগাটন বরফ গলে গেছে, যা অলিম্পিক গেমসের ১৮ কোটি সুইমিং পুল ভরার সমতুল্য। স্ক্যান্ডিনেভিয়া, আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জ সভালবার্ড এবং উত্তর এশিয়ায় রেকর্ড হারে বরফ গলছে।

যেসব দেশ হিমবাহের ওপর নির্ভরশীল বিদ্যুৎ, সেচ ও পানীয় জলের জন্য, তাদের জন্য এটি বড় হুমকি।

২০২৪ সাল ছিল রেকর্ড উষ্ণ। এর প্রভাবে অ্যামাজন নদীগুলোর পানি রেকর্ড লেভেলের নিচে নেমেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে খরা প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ওকলাহোমা ও কানসাসে ফসল শিকড়ে শুকিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ তাপমাত্রা বিশ্বের ৭৫টি প্রধান হ্রদের প্রায় সব জায়গায় পানির মান ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ড. উহলেনব্রুক বলেন, “অস্থির পানি চক্রের মোট অর্থনৈতিক ক্ষতি হিসাব করা কঠিন। তবে একেকটি বন্যা বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে। পানির প্রাপ্যতা ও সহজলভ্যতার পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা ও সংঘাত বাড়াতে পারে।”

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মহাসচিব সেলেস্ট সাওলো বলেন, “পানি আমাদের সমাজকে টিকিয়ে রাখে, অর্থনীতিকে শক্তি যোগায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। অথচ বিশ্বের পানিসম্পদ ক্রমশ চাপে পড়ছে। পানি সম্পর্কিত দুর্যোগ মানুষের জীবন ও জীবিকায় ক্রমবর্ধমান প্রভাব ফেলছে।”

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025