গাজার সবচেয়ে জনবহুল কিছু এলাকায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। এজন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর শীর্ষ জেনারেলরা হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডাকার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন।
বুধবার একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজা সিটির যেসব এলাকায় এখনো অভিযান চালায়নি এবং যেখানে হামাস এখনো সক্রিয়, সেসব স্থানে এবার অভিযান চালাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নতুন এই বড় অভিযানের প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে ইসরায়েলি সেনারা ইতিমধ্যেই গাজা সিটির জাইতুন এবং জাবালিয়া এলাকায় কাজ করছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চিফ অব স্টাফ এই অভিযানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অভিযানটি ঠিক কবে শুরু হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ওই কর্মকর্তা জানান, আগামী মাসে ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হবে, যার ফলে সক্রিয় রিজার্ভ সেনার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১ হাজার ২০ হাজারে দাঁড়াবে।
এর আগে এই মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো অবশিষ্ট বন্দীদের মুক্ত করা এবং নিশ্চিত করা যে হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীরা যেন আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলের দাবি ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। সেই সঙ্গে ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় তারা। ওই দিনই গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় দুই বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধে গাঁজায় প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার। ২০২৩ এর অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই যুদ্ধবিরতিতে দফায় দফায় বেশির ভাগ জিম্মিদের মুক্ত করা হলেও এখনো হামাসের কাছে জিম্মি রয়েছেন অর্ধশত ইসরায়েলি।
ইসরায়েল বলছে গাজায় অভিযানের মাত্রা বাড়িয়ে বাকি জিম্মিদের ইসরায়েলি মাটিতে ফিরিয়ে নেবে তারা। তবে, প্রশাসনের এই পরিকল্পনায় একদমই ভরসা নেই সাধারণ ইসরায়েলিদের। কারণ, ২২ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই বর্বরতায় গাজাকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দিলেও হামলা-সহিংসতার মাধ্যমে একজন জিম্মিকেও ইসরায়েলে ফেরাতে পারেনি নেতানিয়াহু প্রশাসন। এখন পর্যন্ত যতজন হামাসের জিম্মি থেকে মুক্ত হয়েছেন, সবাই মুক্ত হয়েছেন চুক্তির মাধ্যমে।
হামাসও বলছে, কোনো হামলার মাধ্যমে জিম্মিদের ফেরত নিতে পারবে না ইসরায়েল। কেবল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আর গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের শর্তেই জিম্মিদের মুক্তি দেবে তারা।
এদিকে, গাজা সিটি দখলে নেওয়ার যে পরিকল্পনা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তাঁর জোট করেছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। ইসরায়েলি সরকারের নতুন এই পরিকল্পনায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আবার বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হামাস যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে আলোচনায় বসতে আগ্রহী জানালেও, ইসরায়েল কী চায় তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী দলের সদস্যরা স্পষ্ট জানিয়েছেন হামাসকে ধ্বংস না করে কোনো ধরনের চুক্তিতে পৌঁছাতে রাজি নন।