গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালিসহ ২৫টি পশ্চিমা দেশ। সোমবার দেয়া যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা (যুদ্ধরত) উভয় পক্ষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই, যেন সবাই মিলে এই ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটাতে একত্র হয়, অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।’
তারা আরো বলেছে, ‘আরো রক্তপাতের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা এই সংঘাতের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানাই।’
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ, সুইজারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডসহ মোট ২৫টি দেশ। ইউরোপীয় কমিশনের সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিশনার হাজা লাহবিবও এতে স্বাক্ষর করেছেন। তারা বলেছে, ‘আমরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির সমর্থনে আরো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।’
একই সঙ্গে এই বিস্তৃত বিবৃতিতে ইসরায়েল সমর্থিত গাজা সহায়তা তহবিল (জিএইচএফ) কেন্দ্রিক বিতর্কিত ত্রাণ প্রচেষ্টাকে ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টা গাজার বাসিন্দাদের ‘মানবিক মর্যাদা’ থেকে বঞ্চিত করছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমরা ধাপে ধাপে সাহায্য দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং শিশুসহ বেসামরিক মানুষদের নির্মম হত্যাকে নিন্দা জানাই, যারা শুধু পানি ও খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছিল।’
‘ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা আটকে দেওয়াটা অগ্রহণযোগ্য’ বলেও তারা উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে তাদের দায়িত্ব পালন করে’।
এ ছাড়া বিবৃতিতে ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন তারা ‘সহায়তার প্রবাহের ওপর থেকে অবিলম্বে সব বিধি-নিষেধ তুলে নেয় এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক এনজিও যেন নিরাপদ ও কার্যকরভাবে জীবনরক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারে তা নিশ্চিত করে।’
জাতিসংঘ গত সপ্তাহে জানিয়েছিল, গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত জিএইচএফের মাধ্যমে খাদ্য পেতে গিয়ে ৮৭৫ জন নিহত হয়েছে। এই জিএইচএফ এখন ওই অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণের প্রধান সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর জায়গা দখল করেছে।
২৫ দেশের যৌথ বিবৃতিতে গাজায় হামাসের হাতে এখনো অনেকের জিম্মি থাকার নিন্দা জানানো হয়েছে এবং তাদের ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির’ দাবি জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, একটি সমঝোতাভিত্তিক যুদ্ধবিরতি ‘তাদের ঘরে ফেরার জন্য সবচেয়ে বড় আশার প্রতীক’।
স্বাক্ষরকারী দেশগুলো জানিয়েছে, তারা ‘দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কোনো ধরনের ভৌগোলিক বা জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা’ করে এবং ইসরায়েলের প্রস্তাবিত ‘মানবিক শহরে’ ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছে। বিবৃতিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘জোরপূর্বক স্থায়ী বাস্তুচ্যুতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।’
সূত্র : এএফপি