একজন হুমায়ূন আহমেদ আর পাখির মুখে ‘তুই রাজাকার’

এককালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায় ‘রাজাকার’ শব্দটি উচ্চারণ করা ছিল প্রায় নিষিদ্ধ। সেই সময়ে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাট্যকারদের একজন। আর তিনিই প্রথম বুদ্ধিদীপ্ত এক নাটকীয়তায় এই নিষিদ্ধ শব্দটিকে ফিরিয়ে আনেন মানুষের ড্রয়িংরুমে।

১৯৮৮ সালের জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘বহুব্রীহি’, যেখানে এক টিয়া পাখির মুখে হঠাৎ উচ্চারিত হয়- ‘তুই রাজাকার’!

পুরো জাতি চমকে উঠেছিল, কিন্তু একই সঙ্গে হাসতেও ভুলেনি। কারণ কথাটি এসেছিল এক পাখির মুখ দিয়ে, কিন্তু পৌঁছে ছিল কোটি মানুষের মনে। সেই একটি বাক্য বাংলাদেশে মিডিয়া ভাষার প্রতিরোধী সাহসিকতার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে আছে আজও। বহুব্রীহির সেই ২৬ পর্ব আজও দর্শকদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল।

উল্লেখ্য, হুমায়ূন আহমেদের পিতা ফয়েজুর রহমান আহমেদ ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ১৯৭১ সালে শহীদ হন। তাঁর এই পারিবারিক ইতিহাস হয়তো লেখকের কলমে সাহস জুগিয়েছিল— সত্য বলার সাহস, ইতিহাস তুলে ধরার সাহস।

আজ সেই কিংবদন্তী লেখকের মৃত্যুবার্ষিকী। হুমায়ূন আহমেদ— একজন লেখক যিনি কেবল বই লেখেননি, পাঠক তৈরি করেছেন। তিনি গল্পের ছলে ইতিহাস লিখতেন খুবই চমৎকার, হাসির আড়ালে আসে চোখ ভেজানো তিক্ততা।

বাদশাহ নামদার, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল— এসব শুধু উপন্যাস নয়, সময়ের সাক্ষ্য। গল্প, উপন্যাস, নাটক মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদের রচনার সংখ্যা তিনশরও বেশি। কিন্তু সংখ্যায় নয়, তিনি অমর থাকেন মানুষের হৃদয়ে, কথোপকথনের ছলে, নিসর্গের বর্ণনায়, হিমুর হেঁটে চলা পথে, মিসির আলীর ভাবনায়। আমাদের জেনারেশনের কাছে তিনি নষ্টালজিক হয়ে থাকবেন হিমু চরিত্রের জন্য। আমরা ছিলাম হিমু প্রজন্ম।

একজন হুমায়ূন আহমেদকে বাংলাদেশ আজ খুব মিস করে। তাঁর মতো কেউ আর হয়নি, তাঁর মতো কেউ আর হবে না।

Tags :

Anamul Haque

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025