বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিভিন্ন কারাগার থেকে দুই হাজারের বেশি বন্দী পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে সাত শতাধিক বন্দী এখনও পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ঢাকার বকশীবাজারে কারা সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক।
পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্টে বিভিন্ন কারাগার থেকে ২ হাজার ২০০ বেশি বন্দী পালিয়েছে। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার ও ফিরে আসেন অনেকে। এখনো ৭০০-এর বেশি বন্দী পলাতক রয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি ৯ জন এবং মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত বন্দী ৬০ জন।’
তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি এর মধ্যে এখনো ২৯টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। আরও কিছু গোলাবারুদ বাকি আছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অস্ত্র ফেরত দিলে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।’
এ ছাড়া কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান কারা মহাপরিদর্শক।
নারী বন্দীদের কাশিমপুর থেকে আদালতে আনা-নেওয়ার সময় গরমসহ নানা কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সমস্যার সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন বলেন, কেরানীগঞ্জে আরও একটি কারাগার স্থাপন করার কাজ চলমান। এর মাধ্যমে নারী বন্দীদের এই সমস্যা সমাধান করতে পারব। পাশাপাশি আমাদের বিশেষ কারাগারেও একটি সেলকে নারী বন্দীদের জন্য বরাদ্দ করা হবে। যাতে করে যেসব নারী বন্দীদের যাতায়াতে সমস্যা তাদের জন্য সহজ হয়।’
কারাগারে মাদক বিস্তার রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আপনারা জানেন কারাগারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা থাকে। আমরা কঠোর হয়েছি ফলে আমরা অনেকটা রিকভার করেছি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তত এক হাজারের বেশি অভিযান চালানো হয়েছে। তল্লাশিতে বিপুলসংখ্যক ছোট সাইজের মোবাইল উদ্ধার করেছি। এখন অনেকটা কমেছে তবে বন্ধ হয়েছে বলা যাবে না। আমরা মাদকের বিষয় অনেক কঠোর। এমনকি পেটের মধ্যে ইয়াবা নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে বেশি ধরা পড়ছে। আর মাদক মামলায় যারা গ্রেপ্তার তাদের কারাগারে আনার পর বিশেষ সেলে রাখা হয়। যাতে করে সে মাদক ছড়িয়ে দিতে না পারে। এমনও বন্দী এসেছে যার পেটে ১ হাজার ২০০ ইয়াবা পেয়েছি। আমরা এখনো শতভাগ সফল না, তবে আমরা উন্নতি করেছি। এমনকি মাদকের সঙ্গে জড়িত কারারক্ষীদের চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোবাইলের বিষয় আমরা অনেক কঠোর। এমনকি মোবাইলের আলামত পাওয়ায় ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের ডিভিশন বাতিল করা হয়েছে। কারাগারকে আমরা নগদ টাকা মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। গত এক বছরে ঢাকা কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। এখনো অল্প অল্প ধরা পড়েছে। পূর্বের অবস্থা থেকে উন্নতি হচ্ছে। কারাগার ও কাশিমপুরের রান্না করা খাবার বাসা থেকে দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এর বাইরে এখনো অল্প চলছে সেগুলো বন্ধ করতে সময় লাগবে।
মাদকাসক্তির বিষয়ে জিরো টলারেন্স কঠোরনীতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১ বছরে মাদকসেবী ২৯ জন সদস্যকে মাদক বহন/গ্রহণ/সরবরাহে জড়িত থাকার অপরাধে ফৌজদারি মামলায় কারাগারে প্রেরণসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ সংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারা সদর দপ্তর নিজস্ব ডোপ টেস্টিং মেশিন সংগ্রহ করেছে।
তিনি বলেন, কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি এবং সকল নিয়ম বহির্ভূত বিষয়েও আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। বিগত এক বৎসরে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বাধ্যতামূলক অবসর, ৩৪ জনকে চাকরিচ্যুত, ৪৪০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ ১৭২ জনকে প্রশাসনিক কারণে বিভাগের বাইরে বদলি করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিবার নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা স্কিম হতে সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুদবিহীন লোন সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।