সম্প্রতি জার্মান সংবাদপত্র ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালগেমিইন জেইতুং এবং জাপানের নিক্কেই এশিয়া সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক ফোনকল ধরেননি। এই প্রতিবেদনগুলো বলছে, চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার কারণে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে এবং মোদির এই আচরণ তার “গভীর ক্ষোভ এবং কূটনৈতিক সতর্কতার” বহিঃপ্রকাশ।
শুল্ক নিয়ে দ্বন্দ্বের মূল কারণ:
- ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কও অন্তর্ভুক্ত।
- যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে।
- অন্যদিকে, ভারত এই পদক্ষেপকে তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল হিসেবে দেখছে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
মোদির নীরবতার কারণ:
প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, মোদির ফোন না ধরার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
- বাণিজ্যিক বিরোধ: ভারতের ওপর ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নয়াদিল্লিতে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। মোদি এই আচরণের মাধ্যমে ওয়াশিংটনকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছেন যে, ভারত একতরফা সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
- ট্রাম্পের ভুল ব্যাখ্যার আশঙ্কা: অতীতে ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে তার মধ্যস্থতার বিষয়ে এমন কিছু মন্তব্য করেছিলেন যা নিয়ে ভারত অসন্তোষ প্রকাশ করে। মোদি সম্ভবত এই ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চাইছেন, যেখানে ট্রাম্প তাদের ফোনালাপের বিষয়বস্তু জনসমক্ষে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।
- পাকিস্তানের প্রসঙ্গ: অতীতে ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার উত্তেজনা প্রশমিত করার কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করেছিলেন, যা ভারতের কাছে অসম্মানজনক ছিল। এই ধরনের কূটনৈতিক অস্বস্তি এড়াতেও মোদি ফোনে কথা বলতে আগ্রহী নন।
সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা:
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদির এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায় যে, ভারতের কূটনৈতিক কৌশল এখন আরও কৌশলী ও সতর্ক হয়ে উঠেছে। যদিও ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মোদি প্রথম নেতাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।