দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার কাঞ্চন মোড়ে অবস্থিত ‘জীবন মহল’ নামক একটি বিনোদন পার্কে সম্প্রতি ‘ইসলামবিরোধী’ ও ‘অসামাজিক’ কার্যকলাপের অভিযোগে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে সংঘটিত এই সহিংসতায় অন্তত পাঁচজন সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঘটনার সূত্রপাত: জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ‘তৌহিদী জনতা’ এই পার্কটিতে অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে বলে অভিযোগ করে আসছিল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৭ আগস্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পার্কটির ‘হোয়াইট হাউস’ নামক রিসোর্টে অভিযান চালায়। অভিযানে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে পার্কের ম্যানেজারসহ ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় এবং মালিকপক্ষকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থেকে সংঘর্ষ: এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে তৌহিদী জনতা পার্কটির সামনে অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। একই সময়ে পার্কের মালিক ড. আনোয়ার চৌধুরী (জীবন) ও তার অনুসারীরা তার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে একটি সমাবেশ করেন।
একই সময়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উভয়পক্ষের মধ্যে প্রথমে বাকবিতণ্ডা এবং পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতা পার্কের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ: হামলাকারীরা পার্কের ভেতরে থাকা একটি ‘দরবার শরীফ’ ও একটি ‘মেডিটেশন সেন্টার’-এ অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া, ঘণ্টাভিত্তিক ভাড়া দেওয়া কটেজ, রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা পার্কের বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রীও লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। পার্ক মালিকের দাবি, এতে প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংঘর্ষের সময় অন্তত ৮-১০টি মোটরসাইকেলও ভেঙে ফেলা হয়।
পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা: হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের সময় লেগেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দাবি ও অভিযোগ: তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে গিয়েছিল, কিন্তু পার্ক মালিকের ভাড়া করা লোকজন তাদের ওপর হামলা চালালে তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অন্যদিকে, পার্ক মালিক আনোয়ার চৌধুরী (জীবন) অভিযোগ করেছেন যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এবং ভাড়া করা লোকজন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও এনেছেন।