১২ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

১২ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। এ আদেশে আরও ৭টি দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা ৯ জুন রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।

ওই ঘোষণা অনুযায়ী ইরান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, মিয়ানমার, চাদ, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লিবিয়া, সোমালিয়া ও সুদানের নাগরিকেরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে যে ৭টি দেশের ওপর— বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, বৈধ ভিসাধারী, নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরিতে আবেদনকারী এবং যাদের প্রবেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন—তাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। মার্কিনিদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

হোয়াইট হাউসের উপপ্রেস সচিব অ্যাবিগেইল জ্যাকসন সামাজিক মাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমেরিকানদের রক্ষা করতে এমন বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন, যারা আমাদের ক্ষতি করতে পারে। এই যৌক্তিক নিষেধাজ্ঞাগুলো দেশভিত্তিক এবং সেসব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে যথাযথ নিরাপত্তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেই, ভিসা নিয়ে অতিরিক্ত সময় অবস্থানের হার বেশি, বা যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাস ও অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ে ব্যর্থ।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে নতুন হুমকি দেখা দিলে এই তালিকায় আরও দেশ যুক্ত হতে পারে। এই তালিকা পর্যালোচনার আওতায় থাকবে এবং যদি কোনো দেশ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারে, তবে তা বিবেচনা করা হবে। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্য খারাপ, তাদের আমাদের দেশে প্রবেশে বাধা দিতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমেরিকাকে সুরক্ষিত রাখতেই এই পদক্ষেপ।’

ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই ট্রাম্প মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন এমন দেশের তালিকা প্রস্তুত করতে, যেখান থেকে আসা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা যাচাইয়ে ঘাটতি রয়েছে। ওই তালিকার ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রণীত হয়।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি সাতটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন, যা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে তা প্রত্যাহার করেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেখানে দুই দশকের যুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করা অনেক আফগান নাগরিক এখনো ‘ঝুলন্ত’ অবস্থায় রয়েছেন। আগের নির্বাহী আদেশগুলোর কারণে বহু আফগান আশ্রয়প্রার্থী এবং বিশেষ অভিবাসী ভিসাধারী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ হারিয়েছেন।

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আফগানইভাকের প্রতিষ্ঠাতা শন ভ্যান্ডিভার এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে বলেন, ‘এই ঘোষণাটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেসব পরিবার ও ব্যক্তি আইনি উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চাইছেন তাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটি তাৎক্ষণিক হুমকির প্রতিক্রিয়া নয়, বরং একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।’

এদিকে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করাই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। যদি কেউ এতটাই বোকা হয়, তবে যাক যুক্তরাষ্ট্রে।’

মানবাধিকার সংস্থা অক্সফাম এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘ভয়ের রাজনীতি, বৈষম্য এবং বিভাজনের নীতিতে ফেরার এক শীতল বার্তা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। অক্সফাম আমেরিকার সভাপতি অ্যাবি ম্যাক্সম্যান বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধ ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা পরিবারগুলোকে আশ্রয় থেকে বঞ্চিত করবে এবং তাদের আরও বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে দেবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন ঘোষণাটি আবারও তাঁর অভিবাসন-নীতি ঘিরে বিতর্ক উসকে দেবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 15