যে কারণে দেশে ফিরছেন না তারেক রহমান

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন দেশে ফেরেননি বলে জানিয়েছেন তার উপদেষ্টা মাহদী আমিন।

তিনি বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নয়, সম্পূর্ণ মাকে বাঁচানোর প্রয়োজনেই নেওয়া। এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউনির্ভর পরিস্থিতিতে দেশে এলে যেমন জনসমাবেশ ও নিরাপত্তাজনিত বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো, তাতে চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই এই সিদ্ধান্ত।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন তিনি।

মাহদী আমিনের ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, দেশবাসীর অনিঃশেষ দোয়া-আন্তরিকতা ও কূটনীতিকদের সহযোগিতায় তার শারীরিক অগ্রগতি হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। উন্নত ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ম্যাডামকে অতি শীঘ্র লন্ডনের হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

‘এই চিকিৎসা-প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ডা. জুবাইদা রহমান, যিনি লন্ডন থেকে সার্বিক সমন্বয় করে যাচ্ছেন। তিনি আজই দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে কাল সকালে ঢাকা পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন, যেন সঙ্গে থেকে দেশনেত্রীকে কাতারের অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন নিয়ে যেতে পারেন। তবে তার আগেই যদি ফ্লাইট ব্যবস্থা করা যায় কিংবা তার আসা না হয়, সেই বিবেচনায় লন্ডনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ইতিমধ্যে ঢাকায় এসেছেন। ম্যাডামের পুত্রবধূ শর্মিলা (শামিলা) রহমান, কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তাও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সার্বক্ষণিক পাশে থাকবেন বলে জানা গেছে।’

তিনি লেখেন, ‘চলমান প্রক্রিয়ার প্রতিটি বিষয়, অর্থাৎ মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে নিয়মিত ব্রিফিং, লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রস্তুতি, দেশনেত্রী ও ডা. জুবাইদা রহমানের ভ্রমণের ব্যবস্থাপনা- সবকিছুর তত্ত্বাবধান করছেন তারেক রহমান।’

‘তিনি শুধু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন; একাধারে শহীদ জিয়া ও আপষহীন নেত্রীর আদর্শবাহী সন্তান; যার কাছে দায়িত্ববোধ, মাতৃস্নেহ ও দেশপ্রেম একে অপরের পরিপূরক। তারেক রহমান যদি পপুলার পলিটিক্সকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে ছুটে আসতেন, তাহলে তিনি চিকিৎসক স্ত্রীর সঙ্গে একযোগে নিখুঁতভাবে যে তদারকি করছেন, তা কি এভারকেয়ার হাসপাতালের হৈ চৈ, ভিড়, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে করা যেত?’

‘তারেক রহমানের দেশে আসা মানেই লক্ষ-লক্ষ মানুষের ঢল, জনসমুদ্রের উত্তাল আবেগ, যা জনগণের আবেগ ও ভালোবাসা হলেও অন্যান্য রোগী, চিকিৎসা পরিবেশ, এমনকি দেশনেত্রীর নিজের জন্যও কতটা ভালো হতো? সিসিইউতে থাকা মায়ের জন্য এমন কোনো যৌক্তিক দায়িত্ব ছিল, যা তারেক রহমান দেশে গণমানুষের ভালোবাসায় সৃষ্ট ভিড়ের মাঝে করতে পারতেন। কিন্তু নিরিবিলিতে লন্ডন থেকে বিশেষজ্ঞ, হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় নিশ্চিত করে আরও সুচারুভাবে করছেন না?’

‘ম্যাডাম যখন চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন ইনশাআল্লাহ, যদি দেশে আসতেন, তখন কি তারেক রহমান এখানে থেকে যেতেন, নাকি মায়ের সঙ্গে চলে যেতেন? থেকে গেলে অতিউৎসাহী গোষ্ঠী বলতো, তিনি মায়ের সাথে কেন গেলেন না। আর চলে গেলে বলতো, তিনি নির্বাচনের জন্য কেন থাকলেন না?’

‘সুতরাং তারেক রহমানকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, মায়ের সুস্থতা ও দেশের স্থিতির স্বার্থে। তিনি একই সঙ্গে সন্তানের দায়িত্ববোধে নিবেদিত, আবার জাতীয় নেতার দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ। মনে রাখা প্রয়োজন, তারেক রহমানের কাছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রথমে মা, তারপর নেত্রী। মায়ের প্রতি তার ভালোবাসার সাথে আমাদের কারও ভালোবাসার তুলনা করা অন‍্যায়, অবিচার। তিনি তার মায়ের জন‍্য যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটিই করছেন, সেটিই করে যাবেন।’

মাহদী আমিন আরও লেখেন, ‘তারেক রহমানকে দল ও দেশের স্বার্থ একই সাথে দেখতে হচ্ছে। অগণতান্ত্রিক আধিপত‍্যবাদীদের ষড়যন্ত্র কখনোই শেষ হওয়ার নয়। সেটিকে প্রজ্ঞা ও বাস্তবতার সাথে প্রতিহত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব। বেগম খালেদা জিয়ার সারা জীবনের সংগ্রামের মূল প্রতিজ্ঞা হলো, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ‍্য দিয়ে জনগণের অধিকার ও দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা।’

‘সেই ঐতিহ্যগত অভিযাত্রায়, ব‍্যক্তিগত আবেগেকে ধারণ করলেও তারেক রহমানকে যুক্তিকেই প্রাধান্য দিতে হচ্ছে। ম্যাডাম ইনশাআল্লাহ নিরাপদে লন্ডনে পৌঁছালে, উনাকে একটু সেটেল করে দিয়ে ও স্থানীয় সব ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে শীঘ্রই তিনি দেশে ফিরবেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে গভীর ভালোবাসায় বরণ করে নিতে প্রস্তুত বিএনপি, প্রস্তুত প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ।’

‘আসুন, এই কঠিন সময়ে অপপ্রচারকে পেরিয়ে আমরা দেশনেত্রীর দ্রুত আরোগ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্য আন্তরিক দোয়া করি। আল্লাহ তাকে সুস্থ করুন এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আমাদের মাঝে দীর্ঘকাল রাখুন, আমিন’ যোগ করেন মাহদী আমিন।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025