অফিসারদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন যে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, একটি নির্বাচিত সরকারই দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেনাবাহিনী প্রধান এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যগুলি ২১ মে ২০২৫, বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে অফিসারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তব্যে তুলে ধরেন। বৈঠকে সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এতে নির্বাচন ছাড়াও মানবিক করিডোর, বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং সংস্কারসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
আলোচিত মূল বিষয়গুলো:
নির্বাচন ও সুশাসন: জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের গতিপথ নির্ধারণে একটি নির্বাচিত সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে তাঁর ধারাবাহিক অবস্থান বজায় রাখেন।
রাখাইনে মানবিক করিডোর: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি মানবিক করিডোর নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন যে, যেকোনো সিদ্ধান্ত অবশ্যই একটি নির্বাচিত সরকার থেকে আসতে হবে, তা বৈধ হতে হবে, জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে গড়ে উঠতে হবে।
‘মব ভায়োলেন্স’ দমনে কঠোরতা: মব ভায়োলেন্স বা সংগঠিত বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন যে, সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে, যা উচ্ছৃঙ্খল জনতার নামে সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলার প্রতি শূন্য সহনশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি ব্যবস্থাপনার বিতর্কের বিষয়ে সেনাপ্রধান স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত একটি রাজনৈতিক সরকার দ্বারা নেওয়া উচিত।
সংস্কার বিষয়ে পরামর্শের অভাব: জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান চলমান সংস্কার সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানের অভাব বা পরামর্শের অভাব প্রকাশ করেন, যা ইঙ্গিত করে যে তিনি তাদের প্রকৃতি বা বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনায় জড়িত নন।
ঈদুল আযহার আবেদন: ঈদুল আযহা আসন্ন হওয়ায়, সেনাপ্রধান সকলের জন্য একটি নিরাপদ ও উৎসবমুখর উদযাপন নিশ্চিত করতে সহযোগিতা কামনা করেন।
নিরপেক্ষতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের অঙ্গীকার: জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পুনর্ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই জাতীয় সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে এমন কোনো কার্যকলাপে জড়িত হবে না। তিনি সেনাবাহিনীর সকল স্তরের কর্মীদের ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ থাকতে এবং সততা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সেনাবাহিনীর চলমান সহযোগিতার কথাও স্বীকার করেন।