করিডোর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য ‘স্লিপ অব টাং’

মিয়ানমারের যুদ্ধ জর্জর রাখাইন রাজ্যে সহায়তা পাঠাতে মানবিক করিডোর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য ‘স্লিপ অব টাং’ বলে দাবি করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি এ কথা বলেন।

খলিলুর বলেন, “করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি, হবেও না।… পররাষ্ট্র উপদেষ্টা করিডোর শব্দটি স্লিপ অব টাং।”

মানবিক করিডোর নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের মতভেদের বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে যে প্রচার চলছে তা সত্য নয় বলেও দাবি করেন খলিলুর রহমান।

তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের মতো মতভেদ নেই।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বলেছিলেন

গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তার মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, “এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য করিডর) একটা হবে।”

বাংলাদেশের কিছু শর্ত রয়েছে জানালেও সেগুলো প্রকাশ করতে রাজি নন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।”

উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এ নিয়ে উদ্বেগ জানায়। অনির্বাচিত সরকারের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলে দলগুলো।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মানবিক করিডোর দেওয়া নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আর যুদ্ধ দেখতে চাই না।”

প্রেস সচিবের বক্তব্য কী ছিল?

দুদিন পর রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অবশ্য বলেন, এ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।

বিশ্বের বড় কোনো শক্তি এই করিডোরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে প্রতিবেদন করা হয়েছে, সেগুলো ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডা’ বলেও দাবি করেন তিনি।

অবশ্য সরকার যে মিয়ানমারে সহায়তা পাঠাতে আগ্রহী এ বিষয়ে প্রেস সচিব একাধিকবার বক্তব্য রেখেছেন।

২৯ এপ্রিল বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।”

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করে প্রেস সচিব আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে যে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে।”

‘ম্যান্ডেট আছে’, এমনও বলেছেন প্রেস সচিব

চলতি সপ্তাহে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনায় এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকার প্রশ্নের জবাবেও মিয়ানমারে সহায়তা পাঠাতে করিডোরের পক্ষে কথা বলেন।

উপস্থাপিকার প্রশ্ন ছিল, অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমোদন আছে কি না।

জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা এত বছর ধরে পড়ে আছে। কিছু হচ্ছে না, আমরা একটা দেখব না?

“আমাদের হাই রিপ্রেজেনটেটিভ সবার সাথে কথা বলছেন। প্রফেসর ইউনূস জাতিসংঘে গিয়ে বলেছেন। তার বলার কারণে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, যার ফলে এ বছরের সেপ্টেম্বরে একটি বড় সম্মেলন হবে, ১৭০টি দেশ সেখানে অংশগ্রহণ করবে।”

এটাও সংস্কারের অংশ দাবি করে তিনি বলেন, “কারণ রোহিঙ্গা সংকটটা পড়ে আছে। এটা ‘নো ওয়ানস বেবি’।”

শফিকুল আরও বলেন, “ওই হ্যাভ গট ম্যান্ডেট টু ডু এভরি থিং।”

Tags :

Staff Reporter

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 16