করোনাভাইরাস : কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ?

আবারও নতুন করে উপস্থিতি জানান দিচ্ছে করোনাভাইরাস। চলতি বছরের শুরু থেকে করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকার পর, জুনের শুরুতেই সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আট দিনের সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, নমুনা পরীক্ষা কম হলেও শনাক্তের হার ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।

এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে করোনার সংক্রমণ বাড়ে—তাই এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আবার হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, করোনা পরিস্থিতি এখন যেমনই হোক না কেন, সরকারকে আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। ল্যাবে পর্যাপ্ত রিএজেন্ট সরবরাহ, জেনোমিক সিকোয়েন্সিং বাড়ানো এবং বর্ডারে নজরদারি নিশ্চিত করতে না পারলে সংক্রমণ মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে।

শনাক্ত ও সংক্রমণের হার বাড়ছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, ২ জুন ২০২৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত এক সপ্তাহে দেশে মোট ৩৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে একজনের। পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ২৬.৫৩ শতাংশ। ২ জুন শনাক্ত হন ১৪ জন, পরীক্ষার বিপরীতে পজিটিভিটি রেট ছিল ৫০ শতাংশ। এরপর ৩ জুন ৯ জন (শনাক্তের হার ২২.৫০ শতাংশ), ৪ জুন ৭ জন (২১.৮৮ শতাংশ), ৫ জুন ৩ জন (১৪.২৯ শতাংশ) শনাক্ত হন। তবে ঈদের ছুটির মধ্যে ৬ ও ৭ জুন কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। ৮ জুন আবার শনাক্ত হন ৩ জন, এদিন শনাক্তের হার ৭৫ শতাংশ।

প্রতিদিন গড় পরীক্ষার সংখ্যা মাত্র কয়েক ডজন। এত কম পরীক্ষার মধ্যেও এমন উচ্চ শনাক্তের হার বিশেষজ্ঞদের চিন্তিত করছে। কারণ, এটি ইঙ্গিত দেয় যে প্রকৃত সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, যা নজরদারির বাইরে রয়ে গেছে।

বার্ষিক পরিসংখ্যান কী বলছে?

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৫ জন এবং মোট মৃত্যু ছিল ২৯ হাজার ৪৯৯ জন। ৮ জুন ২০২৫-এ এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪২ জন এবং ২৯ হাজার ৫০০ জন। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে নতুন শনাক্ত ১ হাজার ১৯৭ জন এবং মৃত্যু মাত্র ১ জন। যদিও এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকদিনের ঊর্ধ্বগতি ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা দিচ্ছে।

গ্রীষ্ম-বর্ষাই ঝুঁকির সময়, সতর্ক হওয়ার তাগিদ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ মনে করেন, এখনই সতর্ক না হলে বড় বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকাতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় দেশে করোনা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। আমাদের এই অঞ্চলে কোভিড সিজন হলো গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল। অর্থাৎ মে, জুন, জুলাই ও আগস্টে বেশি হয়। ফলে করোনা বাড়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নাই।

অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা প্রয়োজনীয় হলেও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। “রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের এটা বলার কিছু নেই। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ।

তথ্য সংগ্রহ ও ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ এখন তথ্য সংগ্রহ করা। এই কাজটি তারা পরীক্ষা করার মাধ্যমে করবে। ল্যাবগুলোতে করোনা নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেন শনাক্ত করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এটা করা আমাদের জন্য সহজ, কারণ এ কাজের জন্য ল্যাব ও অভিজ্ঞ লোক রয়েছে। এখন শুধু রিএজেন্টের মতো জিনিসগুলো লাগবে। আমাদের এয়ারপোর্ট ও স্থলবন্দরে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। কারো যদি কোভিড সন্দেহ হয়, তাহলে নমুনা সংগ্রহ করা ও পরীক্ষা করা। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো, বাইরে থেকে করোনা আসছে কিনা। আর সারাদেশে পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝবো সারাদেশে কতটা ছড়াচ্ছে। এর জন্য নতুন করে গাইডলাইন তৈরি করা প্রয়োজন।

সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

করোনাভাইরাসের উদ্বেগের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফের মাস্ক পরার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সীমান্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে করোনা আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনও কোনও বিধিনিষেধের ঘোষণা আসেনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, যারা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত তারা যেন মাস্ক ব্যবহার করেন ও প্রয়োজনে পরীক্ষা করান।

বর্তমানে সারাদেশে ঈদের ছুটি চলছে। সবচেয়ে জনবহুল এলাকা রাজধানী ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীবাসীর একটা বড় অংশ ট্রেনে ফিরবে। এ অবস্থায় ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীমুখী ট্রেনযাত্রায় যাত্রীদের জন্য মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

রবিবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, ঈদের পর রাজধানীতে ফেরা যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে ট্রেনে ভ্রমণের সময় মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রেলস্টেশন, প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Tags :

Staff Reporter

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 15