কালার রেভোলিউশন: গণতন্ত্রের মোড়কে অস্থিতিশীলতা ও গৃহযুদ্ধের আসল চেহারা

কালার রেভোলিউশন (যেমন জর্জিয়া, ইউক্রেন, কিরগিজস্তান) এবং আরব বসন্ত (তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি) স্বৈরাচার বিরোধী ও ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হিসেবে হাজির করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এদের আসল চেহারা দেখা গেছে।

কালার রেভোলিউশন-এর প্রধান ৫টি প্রবণতা হলো:

১. অস্থিতিশীলতা ও গৃহযুদ্ধ: আরব বসন্তের পর লিবিয়া ও সিরিয়ায় পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করে দেয়। সশস্ত্র গোষ্ঠী ও মিলিশিয়া শক্তিশালী হয়। কালার রেভোলিউশন পরবর্তী অনেক দেশে ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হয়েছে। ইউক্রেন হয়েছে প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্র, হারিয়েছে মানুষ, ভূমি ও রেয়ার আর্থ মূল্যবান খনিজ।

২. স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও সহিংসতা: ‘আন্দোলনের’ ফলশ্রুতিতে স্বৈরশাসক বা পুরনো রেজিম ক্ষমতাচ্যুত হলেও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। মিশরে হোসনি মুবারকের পতনের পর অল্প সময়ের মধ্যেই সামরিক বাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করে নেয়। নতুন শাসকগোষ্ঠী অনেক সময় আগের শাসকদের তুলনায় আরও দমনমূলক হয়ে ওঠে।

৩. সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা: আরব বসন্তে ন্যাটো লিবিয়ায় সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করে, যার ফলে দেশটি ভেঙে যায় এবং যুদ্ধবাজ গোষ্ঠীর হাতে পড়ে। সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক প্রভৃতি শক্তির হস্তক্ষেপ সংঘাতকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। কালার রেভোলিউশনগুলোও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অঙ্গ হয়েছে।

৪. ইসলামী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান: আরব বসন্ত–পরবর্তী শূন্যতায় মুসলিম ব্রাদারহুড, আইএসআইএস, আল-নুসরা ইত্যাদি গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়। জনগণের হতাশা ও বিভ্রান্তিকে ধর্মীয় মৌলবাদীরা রাজনৈতিক পুঁজিতে রূপান্তর করে। এর ফলে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ এমন মাত্রায় শক্তিশালী হয় যে এখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

৫. সামাজিক বিভাজন ও অর্থনৈতিক সংকট: জাতিগত, ধর্মীয় ও আঞ্চলিক বিভাজন গভীরতর হয়েছে। সিরিয়া, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় শরণার্থী সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বিপর্যয়ে রূপ নেয়। অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব বাড়ছে ফলে জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশের কালার রেভোলিউশনের সাথে এসব প্রবণতা মেলান। তাহলে বাংলাদেশের আগামীর দুরবস্থার গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশের দুরবস্থার জন্য কাদের দায়ী করবেন? মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, স্থানীয় ষড়যন্ত্রকারী, নাকি আপনার মূর্খ ‘অসচেতন বিশ্বাসঘাতক’ বন্ধুদের? আসলে দোষারোপ করে লাভ নেই, আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিভাবে কাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলা যায়, সেই দিকে মনোযোগ দিন।

“লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার”

Tags :

A R Khan Asad

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025