মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তার নিজের এলাকার একটি সরকারি কলেজ থেকে, যে সিদ্ধান্তে হতাশা জানিয়েছেন তার ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সরকারি শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ ডিগ্রি কলেজের নাম পাল্টে করা হয়েছে ‘কাপাসিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ’, যদিও ওই এলাকায় ‘কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ’ নামে আরও একটি কলেজ আছে।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ৩৭ জেলার মোট ৬৮টি সরকারি কলেজের নাম পাল্টানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ অধিশাখার পত্রের নির্দেশনার আলোকে এই নামগুলো পরিবর্তন করা হলো।
সবগুলো কলেজের নামেই বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের সদস্য অথবা আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সদস্যদেরও নাম বাদ দেওয়া হতে থাকে।
এবার পাল্টানো ৬৮টি কলেজের নাম সংশ্লিষ্ট এলাকার নামে করা হয়েছে। আবার কোনোটি আগের নামেও ফেরানো হয়েছে।
গত ২৪ এপ্রিল ১৬টি স্কুল, ৩টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দুটি কলেজসহ মোট ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়।
এর আগে ৬৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়, ছয়টি মেডিকেল কলেজ ও ১৪টি হাসপাতাল থেকে শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
সোহেল তাজের প্রতিক্রিয়া
সরকারি স্থাপনা থেকে তাজউদ্দীন আহমদের নাম ফেলে দেওয়া ঘটনায় ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তার ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ।
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু বলার নাই। কারণ, আমার বাবা এবং মা এই দেশের জন্য অনেক ত্যাগ করেছেন কিছু পাওয়ার জন্য না। তাই ওনাদের কর্মের স্বীকৃতি এই দেশ কোনোদিন যদি নাও দেয়, ইটস ওকে, বাংলাদেশ ভালো থাকলেই হলো।”
২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রতীকে সংসদ সদস্য এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকার পরেও গত জুলাই আগস্টে সরকার পতন আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন আন্দোলনকারীদের পক্ষে। সরকার পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের তীব্র সমালোচনাও করছেন তিনি।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নে তাজউদ্দীন আহমদের গ্রামে বাড়ি দরদরিয়া থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কলেজটির অবস্থান।
এই পোস্টে কলেজটির সাবেক এক শিক্ষার্থীর একটি লেখাও শেয়ার করেন তাজউদ্দীন পুত্র, যার শিরোনাম ছিল, ‘মুছে যাক আমার নাম, তবু বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ- তাজউদ্দীন আহমদ’।
সেই লেখায় উঠে আসে, সরকারি কলেজটি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নে তাজউদ্দীন আহমদের গ্রামে বাড়ি দরদরিয়া থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে হাইলজোর গ্রামে।
কলেজটি যখন সরকারীকরণ করা হয় তারও আরও অনেক আগে থেকেই এই কলেজের নামকরণ করা হয় ‘শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজ’, তবে তারও আগে নাম ছিল ‘ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজ হাইলজোর।’
সেই লেখায় আরও জানানো হয়, কাপাসিয়া সদরে কিন্তু আরও একটি ডিগ্রি কলেজ আছে, যার নামও ‘কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ’। সেটি সরকারি করা হয়নি এখনও।
সেই সাবেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন রাখেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের নাম বাদ দিয়ে নতুন নামের কারণে কী কী সুবিধা আমরা পাব। স্বাধীনতা যুদ্ধের এই মহানায়কের নাম বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যই বা কী? কর্তৃপক্ষ কি এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারবে?”