সিলেট অঞ্চলের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী বশির উদ্দিন সরকার মারা গেছেন। দীর্ঘদিন অসুখে ভোগার পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে বশির উদ্দিনের বয়স ছিল ৬৫ বছর।
জানা গেছে, বাউল আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য বশির উদ্দিন সরকার দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না। অর্থাভাবে থেমে ছিল তার চিকিৎসা।
প্রখ্যাত বাউল কফিল উদ্দিন সরকারের কাছে সঙ্গীতের দীক্ষা নিয়েছিলেন বশির উদ্দিন। বেহালার সুরে মাতোয়ারা করতেন শ্রোতাদের। গেয়েছেন অগণিত লোকগান। গান দিয়ে ছড়িয়েছেন প্রেম, মানবতা আর সত্যের কথা।
লোকসংগীত জগতে বাউল বশিরের চলে যাওয়া এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার মৃত্যুতে সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন।
লেখক হাসান মুরশেদ ফেসবুকে লিখেছেন- ‘বহুবছর আগে আমার সাথে যারা টাঙুয়া আর যাদুকাটা ভ্রমণ করেছিলেন, তাঁদের হয়তো বাউল বশির উদ্দিনকে মনে আছে। দুটি ট্যুরেই বশির ভাই তাঁর গানের দল নিয়ে আমাদের সাথে ছিলেন। শাহ আব্দুল করিমের সান্নিধ্য পাওয়া ভীষন প্রাণবন্ত একজন শিল্পী ছিলেন। পারিবারিকভাবেও আমাদের ঘনিষ্ঠজন, দেখা হলেই আন্তরিক হাসিতে আমার পুত্রদের খোঁজ নিতেন- “মাটির ছেলেরা কেমন আছে”? অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। আজ চিরবিদায় নিলেন। প্রাণ থেকে যারা শিল্পী, এমনিতেই এই সমাজ কোনোদিন ভালোভাবে গ্রহণ করেনি তাঁদের। আর এখন তো শিল্পের সব ঘরানার উৎসমুখ বন্ধ প্রায়। এ জীবন যেমনই কাটুক, অন্য আলোয় ভালো থাকুন আমাদের বাউল, প্রিয় বশির ভাই।’
কবি বেলাল আহমেদ লিখেছেন, ‘বাউল বশির উদ্দিন। মাঝে মধ্যে যে মানুষটা ফোন কইরা বলতেন- কেমন আছেন? আমি ভালো আছি বললেও মানতেন না। বলতেন- আমি বুঝি বেলাল ভাই, দেশ ছাইড়া যাওয়ায় আনন্দ অনেকেরই হয়, ভালো অনেকেই থাকে। বাহির থাইকা আপনি ভালো থাকলেও, ভেতর থাইকা আপনি ভালো নাই। তবু বাচ্চাদের সুন্দর ভবিষ্যতের লাইগা হইলেও আপনাকে ভালো থাকতে হইবে। সিলেট মিররে নিয়মিতই আসতেন বশির ভাই। আড্ডা দিতে দিতে কত সন্ধ্যা পার হইছে। ভেতর থাইকা মানুষটা শিল্পী ছিলেন। আজ বশির ভাইও চইলা গেলেন। ওপারে ভালো থাইকেন বশির ভাই।’