জগন্নাথ হলের ছেলেরা শিবিরের প্রার্থীদের আবার প্রশ্ন করে কেন? প্রশ্নের কি আছে? আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ঘাতকরা তো শিবিরই- নাম বদলালেই কি একটি সংগঠনের কৃতকর্ম মুছে যাবে? না, যাবে না। যাহা শিবির তাহাই সংঘ, তাহাই আলবদর। এইটা নিয়ে প্রশ্নের কিছু নাই, উত্তরেরও কিছু নাই।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের বিপক্ষে পাকিস্তানী মিলিটারির অঙ্গ আধা সামরিক বাহিনী করেছিল ওদেরকে আমরা সাধারণভাবে রাজাকার বলি বটে, কিন্তু ওরা সকলে রাজাকার ছিল না। তিনটা বাহিনী ছিল, ওদের একটা ছিল রাজাকার। রাজাকারের সদস্যরা ছিল সাধারণ মানুষজন, ওরা একটা ভাতার বিনিময়ে সেই বাহিনীতে কাজ করতো, ওদের নিয়োগ করা হতো মাস্টার রোলের ভিত্তিতে। বাকি দুইটা বাহিনী ছিল আলবদর আর আল শামস। এই দুইটাই ছিল জামায়াতে ইসলামী ও ওদের ছাত্র সংগঠনের লোকজন নিয়ে গঠিত।
আলবদরের সদস্যরা ছিল সেই সময়ের ইসলামী ছাত্র সংঘ সংক্ষেপে যারা নিজেদেরকে বলতো আইজেটি। আইজেটির পূর্ণ রূপটা ছিল খুব সম্ভবত ইসলামিক জমিয়ত-ই-তালাবা বা তালিবান। সম্ভবত বলছি কারণ স্মৃতি থেকে বলছি, হুবহু নামটা তালাবা ছিল নাকি তালিবান ছিল মনে করতে পারছি না। বাংলায় নাম ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ। ১৯৭১ সনের নভেম্বরে ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় আলবদর বাহিনী। এর প্রধান বা নাজিমে আলা ছিল মতিউর রহমান নিজামি। আর কয়েকজন শীর্ষ নেতা ছিল আলী আহসাম মুজাহিদ, চৌধুরী মইনুদ্দিন আর মীর কাসেম আলী। নিয়াজি ছিল এদের পৃষ্ঠপোষক।
আপনারা জানেন যে ওরা আমাদের সাথে যুদ্ধে করুন পরাজয় বরণ করে। ১৬ই ডিসেম্বরের পর ওদের পক্ষে এদেশে বিরাজ করাটাই কঠিন হয়ে যায়। নেতৃস্থানীয় আলবদররা অনেকেই দেশত্যাগ করে। চৌধুরী মইনুদ্দিনের কথা আপনারা জানেন, সে চলে যায় লন্ডনে। মীর কাসেম আলী পালিয়ে যায় সৌদি আরবে। ১৯৭১ সনের শেষদিকে মীর কাসেম আলী আইজেটির প্রাদেশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল। চিটাগাং কলেজে পড়তো, মুক্তিযুদ্ধের সময় নৃশংসতার জন্যে চট্টগ্রামে ওর নাম পড়েছিল বাঙালী খান।
স্বাধীনতার পর ওদের অনেকেই জাসদে ঢুকে বা অন্যভাবে ঘাপটি মেরে ছিল। ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একসময় জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগও তখন তৈরি হয়। সেইসময় এসে ১৯৭৭ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে একটা সভা করে ছাত্র সংঘ নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করে, আর সেই নতুন নামই হচ্ছে ইসলামী ছাত্র শিবির। আর এই সংগঠনের সভাপতি হয় মীর কাসেম আলী, যে কিনা ১৯৭১ সনে ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিল।
এখনকার যারা ছাত্র শিবির নেতা কর্মী, এরা সেই আইজেটি বা ছাত্র সংঘেরই নয়া রূপের নেতা কর্মী, সেই অপ আদর্শেরই ধারক ও বাহক। এটা নিয়ে প্রশ্ন করার বা সাফাই দেওয়ার কোন অবকাশ নেই।