উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে মঙ্গলবার রাতে যেন বসেছিল গোলের মেলা। বার্সেলোনা, পিএসজি, আর্সেনাল রীতিমতো গোলবন্যা বইয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষের জালে। এদিন মোট ৯ ম্যাচে ৪৩টি গোল হয়েছে।
ক্ল্যাসিকোর আগে বার্সার দাপট
এল ক্ল্যাসিকোর ঠিক পাঁচ দিন আগে যেন ‘সঠিক সুরটা’ খুঁজে পেল বার্সেলোনা। মঙ্গলবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে ৬-১ গোলের দাপুটে জয়ে একদিকে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল হানসি ফ্লিকের দল, অন্যদিকে নিজের নামটা নতুন করে আলোচনায় তুললেন ফেরমিন লোপেজ। হুয়েলভার এই তরুণ মিডফিল্ডার করলেন অসাধারণ হ্যাটট্রিক—আর তার সঙ্গেই ক্ল্যাসিকোর পথে বার্সা যেন বার্তা ছুড়ে দিল প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদকে।
লুইস কম্পানিস স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুটা যদিও বার্সার জন্য সহজ ছিল না। প্রথম মিনিটেই রক্ষণভাগের ঢিলেমিতে বিপদে পড়ে গিয়েছিল দল; কিন্তু গোলরক্ষক শেজনির চমৎকার সেভে রক্ষা পায় তারা। এরপরই শুরু হয় ফেরমিন-ঝড়। লামিন ইয়ামালের এক ব্যর্থ আক্রমণ থেকে ফিরতি বলে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন এই মিডফিল্ডার। সেখান থেকেই বদলে যায় ম্যাচের ধারা।
মাঝমাঠে তার দৌড়ঝাঁপ, ট্যাকল, আর দ্রুত পাসে বার্সা ফিরে পায় হারানো তাল। বল দখলে অলিম্পিয়াকোস চাপ দিলেও সুযোগগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। প্রথমার্ধের শেষদিকে পেদ্রির অসাধারণ রিকভারির পর তরুণ ফুটবলার ড্রো পাস দেন ফেরমিনকে, আর তিনি নিখুঁত ফিনিশিংয়ে ২-০ করেন স্কোরলাইন।
দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা অনিশ্চয়তা ফিরেছিল। এরিক গার্সিয়ার ফাউল থেকে পেনাল্টি পেয়ে গোল শোধ করে অলিম্পিয়াকোস, যদিও রিপ্লেতে দেখা যায় অফসাইড পজিশনে ছিলেন কাবি। পরক্ষণেই বিতর্কিত লাল কার্ডে মাঠ ছাড়েন হেজে, আর সেখানেই ম্যাচের দিক পুরোপুরি ঘুরে যায় বার্সেলোনার পক্ষে।
শেষ ৩০ মিনিটে বার্সা ছিল অপ্রতিরোধ্য। ইয়ামাল পেনাল্টি থেকে গোল করেন, দুবার জালের দেখা পান রাশফোর্ড, আর নিজের হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করেন ফেরমিন—সবগুলোই বাঁ পায়ে। বলা চলে, তথাকথিত ‘দুর্বল পা’ দিয়েই বার্সাকে উড়িয়ে দিলেন তিনি।
এই জয়ের পর লা লিগার সবচেয়ে বড় ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে বার্সা শিবির। কোচ ফ্লিকের মুখেও দেখা গেছে স্বস্তির হাসি। ক্ল্যাসিকোর আগে এটাই ছিল হয়তো সবচেয়ে দরকারি সংকেত—দলটি আবারও ‘সত্যিকারের বার্সেলোনা’-র ছন্দে ফিরছে।
আলো কাড়ল পিএসজি
সাত গোল করে পাদপ্রদীপের আলোয় ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। প্রথমার্ধেই দাপট দেখায় তারা। উইলিয়ান পাচো ও খিচা কাভারাস্কেইয়ার গোলের মাঝে দু’বার জালের দেখা পান দেজিরে দুয়ে। লেভারকুসেনের আলেহান্দ্রো গ্রিমালদো একটি পেনাল্টি মিস করলেও আলেইক্স গার্সিয়া স্পট কিক থেকে একটি গোল শোধ করেন।
প্রথমার্ধে অবশ্য উভয় দলই একজন করে খেলোয়াড় হারিয়েছে। লেভারকুসেনের রবার্ট আন্দরিশ ও পিএসজির ইলিয়া জাবারনি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।
বিরতির পরপরই নুনো মেন্দেস পিএসজির পঞ্চম গোল করেন। গার্সিয়া ব্যবধান কমিয়ে আনেন ৫-২ গোলে। এরপর ইনজুরি কাটিয়ে ও ব্যালন ডি’অর জয়ের পর প্রথম মাঠে নেমে ষষ্ঠ গোলটি করেন ওসমান দেম্বেলে। ইনজুরি সময়ে ভিতিনহা সপ্তম গোলটি পূরণ করেন।
এই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের বাইরে খেলতে গিয়ে সাত গোল করেছে পিএসজি। তিন ম্যাচে পূর্ণ নয় পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন শীর্ষে, গোল ব্যবধানেও এগিয়ে।
আর্সেনালে বধ অ্যাতলেতিকো
প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা আর্সেনাল এমিরেটস স্টেডিয়ামে অ্যাতলেতিকোকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে। মিকেল আর্তেতার দল ইউরোপে টানা তিন জয় তুলে নিয়েছে। সেটা করেছে ক্লিন শিট রেখে।
সব গোলই এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে। গ্যাব্রিয়েল প্রথম গোল করেন, এরপর গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি ব্যবধান বাড়ান। তারপর ভিক্টর গিয়োকেরেস দুইবার জাল খুঁজে পান।
নাপোলির লজ্জা
ম্যাচ শেষে কেভিন ডি ব্রুইনা স্কট ম্যাকটমিনের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। তাঁদের দল নাপোলির ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেল, তা যেন বিশ্বাসই হতে চাইছিল না।
নেদারল্যান্ডসের ক্লাব পিএসভি আইন্দহফেনের মাঠে ম্যাকটমিনের গোলে নাপোলিই এগিয়ে গিয়েছিল। স্বাগতিক দলকে সেটাই বোধ হয় তাতিয়ে দিয়েছিল। ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের এরপর গুনে গুনে ৬ গোল দিয়েছে পিএসভি। ম্যাকটমিনে পরে আরেক গোল করে শুধু ব্যবধানই কমিয়েছেন, দলকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
এই ৬–২ গোলের হারই নাপোলির চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয়। আগের বিব্রতকর রেকর্ডটা ছিল ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার সিটি ও ২০২০ সালে বার্সেলোনার বিপক্ষে। দুই দলের কাছেই নাপোলি হেরেছিল ৪–১ গোলে।
জয় পেয়েছে সিটি
ম্যানচেস্টার সিটির জয়ের দিনে স্পেনে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে প্রথম গোলটি করেন হাল্যান্ড। দ্বিতীয়টি করেন বের্নার্দো সিলভা। তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে আছে পেপ গার্দিওলার দল। এই মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নরওয়েজিয়ান তারকা এখন সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১১ ম্যাচে গোল করেছেন ১৫টি।




