বলিউডের ‘হি-ম্যান’ খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র আর নেই। টানা কয়েক সপ্তাহ রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ের পর সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। মাত্র দুই সপ্তাহ পরই ৯০ বছরে পদার্পণ করার কথা ছিল তার। সেটা আর হলো না। তার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলিউডে।
ধর্মেন্দ্র শুধু দর্শকদেরই নয়, সহশিল্পী, অনুজ থেকে সমগ্র চলচ্চিত্র জগতকেই মুগ্ধ করেছিলেন তার ব্যক্তিত্ব, অভিনয় ও মানবিকতায়। তাই তার মৃত্যু সংবাদে শোকাহত পুরো ইন্ডাস্ট্রি।
প্রয়াত অভিনেতা দিলীপ কুমারের স্ত্রী ও বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সায়রা বানু এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ধর্মেন্দ্রকে স্মরণ করতে গিয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘তার মৃত্যু মেনে নেওয়া অসম্ভব। দিলীপ সাহেব তাকে নিজের ছোট ভাই মনে করতেন। এতটাই কষ্ট পেয়েছি যে কথা বলার শক্তি পাচ্ছি না।’
‘চুপকে চুপকে’ চলচ্চিত্রে ধর্মেন্দ্রর সহশিল্পী শর্মিলা ঠাকুর জানান, শুটিংয়ের সময়কার স্মৃতি তাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘তিনি ছিলেন অসাধারণ মানুষ। সবার বাবাজি। সবার খোঁজ রাখতেন। ভেবেছিলাম, এবারও অসুস্থতা জয় করে ফিরবেন।’
পরিচালক-প্রযোজক করণ জোহর সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘একটি যুগের অবসান। তিনি শুধু কিংবদন্তিই নন, ছিলেন একজন সেরা মানুষ।’
অভিনেতা অজয় দেবগন ইনস্টাগ্রামে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘তার উষ্ণতা, উদারতা ও উপস্থিতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছে। ইন্ডাস্ট্রি একজন কিংবদন্তিকে হারাল।’
অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা মনে করিয়ে দেন, অসুস্থতার মাঝেও ধর্মেন্দ্র সবসময় উজ্জ্বল ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম তিনি সুস্থ হয়ে ফিরবেন। ভাবতেই চাই না, প্রিয় মানুষগুলো একদিন চলে যাবে।’
১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের নাসরালিতে জন্ম ধর্মেন্দ্রর। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও শৈশব থেকেই সিনেমার প্রতি ছিল অদম্য টান। ১৯৬০ সালে ফিল্মফেয়ার ‘ট্যালেন্ট প্রতিযোগিতা’ জিতে বলিউডে পথচলা শুরু। একই বছর ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ ছবিতে অভিষেক।
এরপরের ছয় দশকে তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গড়েছেন এক অনন্য ইতিহাস। রোমান্স, অ্যাকশন, কমেডি— তিন ধারায়ই সমান সফল। ষাটের দশকে ‘ফুল অউর পাথর’, ‘অনুপমা’, ‘আয়ে দিন বাহার কে’ ছবিতে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা পান। এরপর ‘ধর্ম বীর’, ‘হুকুমত’-এ অ্যাকশন হিরো রূপে মাতান পর্দা। পাশাপাশি ‘চুপকে চুপকে’ প্রমাণ করে, কমেডিতেও তিনি সমান দক্ষ।
তবে তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় রমেশ সিপ্পির কালজয়ী ছবি ‘শোলে’। জয়-বীরুর বন্ধুত্ব আজও ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে স্মরণীয়।
অভিনয়, ব্যক্তিত্ব এবং মানবিকতার জন্য ২০১২ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘পদ্মভূষণ’ পান ধর্মেন্দ্র।




